রাসবিহারী বসু ছিলেন ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অগ্রগণ্য বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অন্যতম সংগঠক। দিল্লিতে গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর বোমা হামলায় নেতৃত্ব দানের কারণে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তিনি সুকৌশলে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে পালিয়ে যান। তিনি ভারতের বাইরে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন ও পরবর্তীকালে নেতাজির হাতে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর পরিচালনভার তুলে দেন।
advertisement
স্বাধীনতা সংগ্রামের এই অগ্রগণ্য নেতা ১৮৮৬ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়নার সুবলদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আজও তাঁর জন্মভিটে অবহেলিত। গ্রামবাসীদের আক্ষেপ এই সুবলদহ গ্রামকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরার জন্য সরকারের তরফে যতটা উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল সেটা হয়নি। নামেই বিপ্লবীর জন্মভিটে। গ্রামে পড়ে আছে শুধুই কিছুটা জমি। বিপ্লবীর স্মৃতি বলতে আছে একটা পাকা শৌচাগার। আর একটা ফলকে খোদাই করা বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নাম। তেমন কিছুই চোখে পড়ছে না গ্রামে। এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্দির পীযূশ গোয়েল। সেজে উঠবে সুবলদহ,আশ্বাস মিলেছিল তেমনটাই। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
তবে এ সবের মধ্যেই রাজ্য সরকার বিপ্লবীর জন্মভিটে সংরক্ষণ করার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। সেই টাকা দিয়েই বিপ্লবীর জমি লাগোয়া একটা ছোট পাঁচিল তোলা হয়েছে। করা হয়েছে একটা শৌচাগার। শৈশবে বিপ্লবী সুবলদহ গ্রামের যে পাঠশালায় পড়েছিলেন সেই পাঠশালা এখন ‘সুবলদহ রাসবিহারী বসু প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে পরিচিত। কিন্তু এমন ঐতিহ্যশালী বিদ্যালয়েরও এখন ভগ্নদশা। সেই বিদ্যালয়ের মাঠে রাসবিহারীর একটি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে, তৈরি হয়েছে একটি মঞ্চ, সেখানে সংগ্রহশালা নামে একটি ঘর রয়েছে। তবে তা তালাবন্ধ থাকে বেশিরভাগ সময়। বিপ্লবীর জন্মভিটে সংরক্ষণের জন্য তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে আক্ষেপ গ্রামবাসীদের। তাঁরা বলেন, বহু বছর পর গ্রামে কিছুটা পাকা রাস্তা হয়েছে। আর কিছুই সেভাবে উন্নতি হয়নি। বিপ্লবীর জন্মভিটে কার্যত অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
রাসবিহারী বসুর পিতা কর্মসূত্রে হুগলি জেলার চন্দননগরে থাকতেন। সেখানকার স্কুল ও কলেজের পাঠ সম্পূর্ণ করে রাসবিহারী বসু বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯০৮ সালে তিনি আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত হন। কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর গোপনে বাংলা, উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবের বিপ্লবীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। পরবর্তী সময়ে বাঘা যতীনের একনিষ্ঠ অনুগামী হয়ে ওঠেন তিনি । দেশকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে নানান বিপ্লবী কর্মকাণ্ড তিনি চালিয়ে যান ।
আরও পড়ুনঃ Independence Day 2023: ভারতের জাতীয় পতাকার কোড কত? কেন ব্যবহার হয়
শেষ পর্যন্ত ইংরেজ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এড়াতে পারেননি, ফলে দেশ ছেড়ে চলে যান তিনি। ১৯১৫ সালের ১২ মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে তিনি জাপানের জাহাজে চড়ে বসেন । জাপানে থেকেও ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি নানান কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি জাপানের টোকিওয় রাসবিহারী বসু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।