গ্রামের মানুষ শুধু তাকে আশ্রয় দেননি, তাকে এক নতুন পরিবার, নতুন পরিচয়, নতুন জীবন উপহার দিয়েছেন। গ্রামের তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস, যা সাধারণত রাজনৈতিক কর্মসূচির কেন্দ্র, সেটাই হয়ে উঠেছে রোহিতের চিরস্থায়ী ঠিকানা। সেখানে তাঁর বিছানা, কাপড়-চোপড়, খাবার সবই আছে। আর আছে একরাশ ভালবাসা। এই মানবিক উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন ভাল্কি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সাদেরুল শেখ। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও গ্রামবাসীদের ঐক্যমতের ফলে আজ রোহিত নিরাপদ এক আশ্রয় পেয়েছেন। উপপ্রধান সাদেরুল শেখ বলেন, ‘‘আমরা সবাই ওঁকে নিজের সন্তানের মতো ভালবাসি। খুব ভাল ছেলে, ওঁর মুখে কোনও বাজে ভাষা নেই। গ্রামের কারওকে বিরক্তও করে না।”
advertisement
সারাদিন রোহিত সকাল থেকে অফিসেই থাকেন, তবে মন হলে বেরিয়ে পড়েন গ্রাম ঘুরতে। গ্রামের মানুষই তাঁকে খাবার খাওয়ান। স্কুল থেকে শুরু করে গ্রামের প্রতি বাড়িতেই রয়েছে রোহিতের অবাধ বিচরণ। তিনি যেখানেই যান, তাঁকে আদরের সঙ্গে সেখানে আপ্যায়ন করা হয়। তবে রোহিতকে নিমন্ত্রণ না করলে কোনও অনুষ্ঠানে যান না। সে কারণে গ্রামে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কোনও অনুষ্ঠান হলেই সব জায়গায় তার বিশেষ ভাবে নিমন্ত্রণ থাকে। এছাড়াও উপপ্রধান সাদেরুল শেখ রোজ রাতে রোহিতকে বাইকে বসিয়ে নিয়ে যান নিজের বাড়িতে। সেখানে খাবার খাওয়ান, কথা বলেন, তার পর আবার পার্টি অফিসে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। যেন নিজের সন্তানের মতোই আগলে রেখেছেন তিনি। গ্রামবাসী শেখ বকুল বলেন, “রোহিত আমাদেরই ছেলে। আমরা ওকে ভালবাসি। আশা করি ও একদিন ওর আসল পরিবারকেও খুঁজে পাবে।”
আজও রোহিতের নিজের অতীত মনে নেই। কোথা থেকে এসেছে? কার ছেলে? এই প্রশ্নের উত্তর আজও তাঁর অজানা। শুধুমাত্র “রোহিত” নামটা বলতে পারেন, আর জানেন এই প্রতাপপুরই এখন তাঁর ঘর। বয়স আনুমানিক ২৪ থেকে ২৬। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট, বাম পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুতে চোটের দাগ আছে, কপালে রয়েছে একটা পুরনো ক্ষত চিহ্ন। কিন্তু তাঁর মুখে আছে একরাশ শান্তি, কারণ সে জানে এই গ্রাম, এই মানুষ তাঁকে ভালবাসেন।
মানসিক ভারসাম্য হারানো এই ছেলেটিকে ঘিরে আজ যে গল্প গড়ে উঠেছে, তা নিছক করুণা নয়, বরং সহানুভূতির থেকেও বড় কিছু, যেন নির্ভেজাল ভালবাসা। একাকিত্বকে জয় করে, স্মৃতিহীনতা ভুলে, প্রতাপপুরেই যেন নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছে রোহিত। এই ভালবাসা হয়তো তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারবে তাঁর হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি। আর তত দিন, প্রতাপপুরই তাঁর পরিবার, আশ্রয়, জীবন।