ইতিহাস বলছে, ১৯০৭ থেকে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় ওরফে স্বামী নিরালম্ব তৈরি করেছিলেন এই চান্না আশ্রম। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে সহকর্মী বিপ্লবীদের সঙ্গে মতান্তর হলে যতীন্দ্রনাথ উত্তর ভারত ভ্রমণে বেরোন, পরবর্তীতে এলাহাবাদে সোহং স্বামীর সান্নিধ্য লাভের পর শ্যামাকান্ত বন্দোপাধ্যায়ের কাছে দীক্ষা নিয়ে তিনি নিজের মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান্না গ্রামে ফিরে আসেন।
advertisement
পরবর্তীতে বর্ধমানের গলসি থানার অন্তর্গত চান্নাতে খড়ি নদীর ধারে সুবৃহৎ অঞ্চল জুড়ে চান্না অশ্রম গড়ে তোলেন। জানা যায়, আগে আশ্রমের এই জায়গায় শ্মশান ছিল। তবে চান্না আশ্রমকে আমরা আশ্রম হিসেবে জানলেও আদতে ওটা ছিল বিপ্লবীদের আখড়া। তখন সারারাত চলত বিপ্লবীদের আলোচনা এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। এই প্রসঙ্গে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াত ভাগ্নের ছেলে নবীন চট্টোপাধ্যায় জনিয়েছেন, ঋষি অরবিন্দ, চিত্তরঞ্জন দাস, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ বিপ্লবী অনেকেই যতীন্দ্রনাথের কাছে এসেছিলেন। যতীন্দ্রনাথ ওঁদের সাহায্য করেছিলেন। যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বিপ্লব জীবনে একটি আশ্রম গড়েছিলেন। কিন্তু ওটা বিপ্লবীদের একটা আখড়া ছিল। খুবই মনোরম জায়গা। এখন হয়ত ওটা লোকালয়ের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। ওটা তখন বন জঙ্গলে ঘেরা ছিল। ওখান থেকেই বিপ্লবের সূত্রপাত। বহু বিপ্লবী এসে আখড়ায় ওঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইতিহাস সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রসঙ্গে নবীন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ”যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় হচ্ছেন দেশের সম্পদ। গরিব ঘরের ছেলে ছিলেন তাঁর জীবনী যাতে আমাদের সরকারি স্কুলে পাঠ্য হিসেবে গ্রহণ করতে দেয় তাহলে খুবই ভাল হয়। ওনার যে আশ্রম উনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই আশ্রমটা নবরূপে প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই আমাদের ইচ্ছা।”
অন্যদিকে আশ্রমের সভাপতি অমল বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেন, “আশ্রমের সঙ্গে ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে জড়িয়ে রয়েছি। এই আশ্রম নিয়ে আমরা আগে বিডিও সঞ্জীব সেন এবং বর্ধমান প্রিয়াঙ্কা সিংলা ডিএম-এর সঙ্গে আমরা মিটিং করেছি এবং জানতে পেরেছি আমাদের আশ্রমকে নিয়ে একটা ইকো ট্যুরিজম পার্কেৈর পরিকল্পনা চলছে।”
এই প্রসঙ্গে গলসী ২ নম্বর ব্লকের বিডিও সঞ্জীব সেন বলেন, ”আমি যখন ব্লকে আসার সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। একটা বড় প্রজেক্ট। ওটাকে একটা ইকো ট্যুরিজম পার্কে পরিণত করার জন্য একটা প্রস্তাব রেডি করে ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়েছিলাম। ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ল্যান্ড ডিপার্টমেন্টের কাছে একটা রিপোর্ট চেয়েছে। সেখানেই কাজ আটকে আছে। ওটাকে আগামী দিনে ঢেলে সাজিয়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলে মানুষ যাতে যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে জানতে পারেন সেজন্য ওটাকে একটা আকর্ষণীয় ইকো ট্যুরিজম পার্ক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
আরও পড়ুন: জামাকাপড়ের ফাঁকে গা-ঢাকা দিয়েছে ছোট্ট বিড়াল! ৫ সেকেন্ডে খুঁজে পাবেন কিনা দেখুন তো
তবে কতদিনে এই পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হবে তা বিডিও বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনা ল্যান্ডের কোনও একটা জায়গায় আটকে আছে। ইকো ট্যুরিজম পার্ক হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল প্রায় দুই থেকে আড়াই বছর আগে। কিন্তু তারপর থেকে আজও কোনওরকম সংস্কার বা ব্যবস্থা হয়নি। কাজেই শীঘ্রই সরকার থেকে ব্যবস্থা না নিলে হয়তো স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে পূর্ব বর্ধমানের যে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে তা ক্রমে হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে।