কিছু কিছু মানুষকে একেবারে শৈশব থেকেই ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করে যেতে হয়। অলকাকেও তাই করতে হয়েছে। ছোটবেলায় তিনি টিবি-তে আক্রান্ত হন। ভাঙা শরীর নিয়ে কোনও মতে পড়াশোনা চালিয়ে যান অলকা, হাল তিনি ছাড়েননি।
আরও পড়ুন– ‘হ্যাটস অফ !’ ভারত জয় পেতেই ডিগবাজি…রোহিতের প্রশংসা কংগ্রেস নেত্রী শামা মহম্মদের
অলকা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা সরকারি চাকুরে, সব মিলিয়ে তাঁরা ৬ ভাইবোন। ফলে, টানাটানির সংসারে অসুস্থতা আর পড়াশোনা দুই কীভাবে সামলাতে হয়েছে, তা কল্পনা করাও কঠিন। সে কথা বলতে গিয়ে অলকার নিজের চোখ বেয়েই জলের ধারা নেমেছে।
advertisement
তবে, চোখের জল যে শুধু শারীরিক অসুস্থতাতেই বইবে না, তার আরও কারণ বাকি, সে কথা অলকা তখনও বোঝেননি। বুঝলেন বিয়ের পরে। বাড়ি থেকে ভালমতো খোঁজখবর করেই বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তাঁদের যে ঠকানো হয়েছে, তা বোঝা গেল কেবল বিয়ের পরেই!
অলকাদের বলা হয়েছিল, ছেলে মার্চেন্ট নেভিতে কাজ করে। বিয়ের পর জানা যায় ছেলে একেবারে বেকার! দ্বাদশ শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেটও জাল। এমনকি, বিয়ের পর অলকা যে বাড়িতে এসে উঠেছিলেন, সেটাও তাদের বাড়ি নয়।
অলকা বাবার কাছে ফিরে যান। কিন্তু বাপের বাড়ি থেকে বুঝিয়ে তাঁকে বয়সে অনেক বড় স্বামীর ঘর করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এর পরে শুরু হয় কেবল লাঞ্ছনার পালা। বেকার স্বামীর কাজ ছিল কেবল নেশা করে অলকাকে ঠেঙানো! যখন পেটে ৮ মাসের বাচ্চা, সেই সময়ে তাঁকে মারধর করে রাস্তায় বের করে দেওয়া হয়। গায়ে নাইটি, আঘাতের দাগ আর হাতে ৫ টাকা নিয়ে তিনি কেবল উদভ্রান্তের মতো লোকের দরজায় কড়া নাড়ছিলেন, যদি আশ্রয় মেলে!
অলকা বলেছেন, সে দিন তাঁর বার বার আত্মহত্যার ইচ্ছা জেগেছিল। পেটের ছেলের কথা ভেবে করতে পারেননি। মনে হয়েছিল, ভিক্ষাই করতে হবে এবার থেকে।
যাই হোক, সন্তান প্রসবের সময় আসে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সে পৃথিবীর মুখ দেখে। স্বামী এই সময়ে অলকা আর ছেলেকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়। বাপের বাড়ি হাসপাতালের ৪১ হাজার টাকা শোধ করে মেয়ে আর নাতিকে ছাড়িয়ে আনে।
এর পর বাবা আর অলকাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই লাঞ্ছনার ক্ষতেও প্রলেপ পড়েছে। সফল ইউটিউবার হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়েছেন তিনি। সুপারমম, মিস গোরখপুর- কত না তাঁর তকমা! একজন সফল ব্যাঙ্ককর্মীও তিনি। অলকা বলেন, দ্বিতীয় স্বামী যদি পাশে না দাঁড়াতেন, তাহলে হয়তো এখন জীবনের পথ মসৃণ হত না