আসলে মানুষ তার বিচিত্র খেয়ালে প্রাণীজগতের নানা নামকরণ করে থাকে। ফ্লাইং ফক্স (Flying Fox) বলতে যেরকম উড়ন্ত শিয়াল নয়, বরং বাদুড় বুঝতে হয়, এটাও ঠিক তা-ই! বা যদি আরও একটু স্পষ্ট করতে হয়, তাহলে জেলিফিশের (Jellyfish) উদাহরণও টেনে আনা যেতে পারে। তফাতের মধ্যে ফ্লাইং ফক্স শিয়াল না হলেও, জেলিফিশ মাছ না হলেও গোলিয়াথ বার্ডইটার স্পাইডার (Goliath Birdeater Spider) মাকড়সা তো বটেই- শুধু নাম শুনে যেমনটা মনে হয়, এরা ঠিক তেমনটা নয়।
advertisement
সঙ্গত কারণেই মনে হতে পারে- তাহলে বার্ডইটার নাম দেওয়া হল কেন? পাখি যদি এরা না-ই খায়?
এই রহস্যসূত্র লুকিয়ে রয়েছে এই প্রজাতির মাকড়সার শারীরিক আয়তনে। এরা এতটাই আয়তনে বড়সড় হয় যে মনে হয় পাখি খাওয়া এদের কাছে কোনও ব্যাপারই নয়। এরা আয়তনে একটা স্মার্টফোনের মতো বড় তো হয়ে থাকেই, কখনও কখনও তার চেয়েও বড় হয়, মোটামুটি ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত মাপ হয় এদের। কিন্তু পাখি নয়- আদতে কীটপতঙ্গ খেয়েই নিজেদের পেট ভরিয়ে থাকে গোলিয়াথ বার্ডইটার স্পাইডার, খুব বড় আকারের প্রাণী বললে বড় জোর ব্যাঙ পর্যন্ত এদের খাদ্যতালিকা বিস্তৃত হয়, তার চেয়ে বেশি নয়।
আরও পড়ুন- ভালোমানুষির সুযোগ নেন অন্য লোকে? ইংরেজির ‘T’ অক্ষর দিয়ে নাম শুরু হচ্ছে না তো?
তবে এই বিশাল আয়তনের মতো গোলিয়াথ বার্ডইটার স্পাইডারদের কিছু উল্লেখযোগ্য শারীরিক বৈশিষ্ট্য আছে। শত্রুর মুখে পড়লে এরা এদের পিছনের পা পেটে ঘষতে থাকে, তখন এদের শরীর থেকে বেরিয়ে আসে কাঁটার মতো শক্ত লোম। সেই লোম শরীরে ঢুকে গেলে আক্রমণকারী শত্রু অবশ হয়ে পড়ে। এদের বিষ থাকে না, শত্রু বা শিকারকে অবশ করা পর্যন্তই এদের ক্ষমতা দিয়েছে প্রকৃতি। ফলে কাঁটা ফোটালে মানুষের এদের কাছ থেকে ভয়ের কিছু নেই। এই কাঁটা ঘষার আওয়াজ না কি ঝিঁঝিপোকার ডাকের মতো তীক্ষ্ণ হয়, ১৫ ফুট দূর থেকেও তা শুনতে পাওয়া যায়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রাণী যখন অবশ বা অচেতন হয়ে পড়ে, তখন এরা তাদের টেনে নিয়ে গিয়ে রক্ত শুষে খায়- অন্য প্রজাতির মাকড়সার মতো এরা জালও তৈরি করতে পারে না।