এই অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কনজারর্ভেশন অফ থ্রেটেনড প্যারটস (এসিটিপি)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বনতারার অ্যাফিলিয়েট গ্রিনস জ্যুলজিক্যাল রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার (জিজেডআরআরসি)। গতকালই জার্মানির বার্লিনের এসিটিপি-র ব্রিডিং সেন্টার থেকে সফল ভাবে স্থানান্তর করে ৪১টি স্পিক্সেস ম্যাকাওকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ব্রাজিলের বাহিয়ায়। এভাবেই ওই প্রতিষ্ঠান সাফল্যের এক মাইলফলক তৈরি করেছে।
advertisement
আরও পড়ুন: মাথায় দলা দলা খুশকি ভরে যাচ্ছে? ভরসা রাখুন এই ‘একটি’ জিনিসে! জানুন ডাক্তারের পরামর্শ
গ্লোবাল রিইন্ট্রোডাকশন প্রোগ্রামের অঙ্গ হিসেবে এসিটিপি-কে বিশেষজ্ঞ মতামত এবং ক্রিটিক্যাল রিসোর্সেস প্রদান করছে বনতারা। ব্রাজিলের কাটিঙ্গা বায়োমে এক্সটিঙ্ট-ইন-দ্য-ওয়াইল্ড প্রজাতিকে পুনরুদ্ধার করার অঙ্গীকারকে পুনর্নিশ্চিত করছে। এই অভিযানের পূর্বের সাফল্যের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে এই মাইলফলকটি। অভিযানের আগের সাফল্যের মধ্যে অন্যতম হল ২০২২ সালে ২০টি স্পিক্সেস ম্যাকাও-কে জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়া। যার ফলে কুড়ি বছরেরও বেশি সময় পরে জঙ্গলে জন্মেছে এই প্রজাতির পাখির শাবক। আর এটাই এই অভিযানের দুর্ধর্ষ বিকাশ এবং সাফল্যের পরিচায়ক হয়ে উঠেছে।
ব্রাজিলে স্থানান্তর করার জন্য বংশ এবং স্বাস্থ্যের ভিত্তিতে ৪১টি স্পিক্সেস ম্যাকাওকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ৪১টি পাখির মধ্যে ছিল ২৩টি স্ত্রী পাখি, ১৫টি পুরুষ পাখি। সেই সঙ্গে ছিল তিনটি পাখির শাবক, যাদের লিঙ্গ নির্ধারণ এখনও করা হয়নি। এখানেই শেষ নয়, চলতি বছর আরও কয়েকটি পাখিকে ছাড়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। আবার দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ প্রয়াসকে দৃঢ় করার জন্য ব্রিডিং প্রোগ্রামে যুক্ত করা হচ্ছে আরও কিছু পাখিকে। তবে এই স্থানান্তরের আগে এই পাখিগুলিকে বার্লিনের ব্রিডিং ফেসিলিটিতে ২৮ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে তাদের শরীরে কোনও রোগভোগ রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: হড়হড়িয়ে বেরিয়ে আসবে ময়লা, বাড-কাঠি দিয়ে কানে না খুঁচিয়ে এই একটি কাজ করুন! পুরো ম্যাজিক
এরপর ২৮ জানুয়ারি পাখিগুলিকে বার্লিন থেকে একটি চার্টার্ড বিমানে চাপিয়ে ব্রাজিলের পেট্রোলিনা বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছিল। ওই দিনই পাখিগুলি সেখানে পৌঁছেছিল। এরপর সেখানে পৌঁছতেই সরাসরি ভাবে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানকারই কোয়ারেন্টাইন ফেসিলিটিতে। আর এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার উপর যত্ন সহকারে নজর রেখেছিলেন ২ জন পশুচিকিৎসক এবং এসিটিপি-র একজন কিপার। তাঁদের সঙ্গে অবশ্য ছিল বনতারার জিজেডআরআরসি-র বিশেষজ্ঞ দলও। বিমানবন্দরে পৌঁছেই যাতে সঙ্গে সঙ্গে ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যায়, তার জন্য তৎপর ছিল বর্ডার পুলিশ এবং ফেডারেল কাস্টমসও। তারা একটি অস্থায়ী অফিস স্থাপন করেছিল। বিশেষ গাড়িতে চাপিয়েই পাখি এবং কর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এসিটিপি-র প্রতিষ্ঠাতা মার্টিন গুথ বলেন যে, স্পিক্সেস ম্যাকাওয়ের রিইন্ট্রোডাকশন প্রকল্পে দুর্ধর্ষ অবদানের জন্য অনন্ত আম্বানি এবং বনতারাকে এসিটিপি-র পক্ষ থেকে আমরা আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। এর পাশাপাশি বনতারার তরফে আমাদের প্রতি উদার ভাবে যে আর্থিক সাহায্য এবং বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করা হয়েছে, তা সত্যিই অমূল্য। এর ফলে সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে এক্সটিঙ্ট-ইন-দ্য-ওয়াইল্ড স্পিসিসের ব্রিডিং।
জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার এবং বিপন্নপ্রাণের প্রতি বনতারার দুর্ধর্ষ ডেডিকেশন তো ছিলই। সেই সঙ্গে ছিল তাদের কাজের প্রতি প্যাশন, রিসোর্স এবং সহায়তামূলক কাজের পন্থা। এই সমস্ত কিছুর মেলবন্ধনই উদ্যোগে এনেছে সাফল্য। আর আমাদের আশা, সারা বিশ্বের সংরক্ষণের প্রয়াসকে অনুপ্রেরণা জোগাবে এই অভিযান। আর বনতারার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অন্যান্য আরও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিকে রক্ষা করতে যতটা সম্ভব কাজ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি আমরা।
প্রসঙ্গত, হলিউড ছবি রিও-তে স্পিক্সেস ম্যাকাও দেখানো হয়েছিল। সারা বিশ্বে এই প্রজাতির পাখিদের সংরক্ষণ করার কাজ চলছে। আর তার জন্য ব্রাজিল সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে জিজেডআরআরসি এবং এসিটিপি। ২০১৯ সালে ব্রাজিলে তৈরি করা হয়েছিল একটি ডেডিকেটেড রিলিজ সেন্টার। এরপরেই ২০২০ সালে জার্মানি এবং বেলজিয়াম থেকে ৫২টি পাখিকে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
এবার আসা যাক বনতারা প্রসঙ্গে। ভারতের সংরক্ষণ অভিযানের মাধ্যমে ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ বন্যপ্রাণকে পুনরুদ্ধার করার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বনতারা। এই উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হল – ক্যাপ্টিভ-ব্রেড গণ্ডারদের নিরাপদ বাসস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া, ব্রিডিং ও হ্যাবিট্যাট রেস্টোরেশনের মাধ্যমে এশিয়াটিক লায়নের সংখ্যা বাড়ানো এবং সফল ব্রিডিং প্রোগ্রামের সাহায্যে ভারতের জঙ্গলে চিতাদের ফেরানো।