২৬ বছর বয়সি অভিজিৎ জিস (Abhijith Jees), যিনি কেরলের ওয়ায়ানাডের বাসিন্দা, এবং ২৯ বছর বয়সি আজীশ নেলসন (Ajeesh Nelson), চেঙ্গান্নুরের বাসিন্দা — দু’জনেই সেই বিমানে ছিলেন। তাঁরা দু’জনই পেশায় নার্স, এবং এই ছিল তাঁদের প্রথম আন্তর্জাতিক যাত্রা। গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের Response Plus Medical (RPM) সংস্থা, যেখানে তাঁরা নতুন করে নার্স হিসেবে যোগ দিতে চলেছিলেন। কিন্তু সেই প্রথম উড়ানই তাঁদের জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে গেল।
advertisement
ভীষণ শ্বাসকষ্ট, হাসপাতালে ভর্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র, প্রার্থনায় ভক্তরা, কেমন আছেন বলিউডের ‘হি-ম্যান’?
বিমানের উড্ডয়নের কিছু সময় পর অভিজিৎ লক্ষ্য করেন, ত্রিশূরের এক যাত্রী হঠাৎ আসনে ঢলে পড়েছেন, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এবং কোনো সাড়া দিচ্ছেন না। অভিজিৎ দ্রুত এগিয়ে গিয়ে পালস পরীক্ষা করেন — কিন্তু সেখানে কোনও নড়াচড়া নেই। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন, ওই যাত্রী কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়েছেন।
বিনা সময় নষ্ট না করে অভিজিৎ সঙ্গে সঙ্গেই সিপিআর (CPR) শুরু করেন এবং কেবিন ক্রুদের জানান। তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান আজীশ। ৩৫ হাজার ফুট ওপরে, বিমানের অতি সীমিত জায়গায় দাঁড়িয়ে দু’জন পেশাদার নার্স দুই দফায় সিপিআর চালান — এক মুহূর্তের জন্যও আতঙ্কে ভেঙে না পড়ে শুধু কাজ করে যান নিখুঁত ছন্দে।
আজীশ পরে বলেন, “আমরা একটুও ভয় পাইনি। শুধু ভেবেছিলাম, যা করতে হবে এখনই করতে হবে। এক সেকেন্ডও দেরি করা চলবে না।”
তাঁদের দ্রুত সিদ্ধান্ত ও পেশাদার দক্ষতায় আশ্চর্য ফল মেলে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই যাত্রীর শরীরে পালস ফিরে আসে, তিনি আবার শ্বাস নিতে শুরু করেন। বিমানে উপস্থিত এক চিকিৎসক, ডঃ আরিফ আব্দুল খদির, তখন চিকিৎসার দায়িত্ব নেন — তিনি স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন এবং যাত্রার বাকি সময় ওই যাত্রীর জীবনচিহ্ন (vitals) পর্যবেক্ষণ করেন।
আবুধাবিতে বিমানের নিরাপদ অবতরণের পর রোগীকে বিমানবন্দরের চিকিৎসক দলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।
অভিজিৎ ও আজীশ নিজেরা কোনও প্রচার চাননি। তাঁরা নীরবে তাঁদের নতুন কর্মস্থলে পৌঁছে কাজে যোগ দেন। কিন্তু এক সহযাত্রী, যিনি একই সংস্থার কর্মী ছিলেন, পুরো ঘটনাটি সংস্থার কর্তৃপক্ষকে জানান। এরপর Response Plus Medical সংস্থা দুই নার্সকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানায় এবং তাদের কাজকে “পেশার সত্যিকারের মর্ম” হিসেবে বর্ণনা করে।
অভিযুক্ত যাত্রীর পরিবার দুই তরুণ নার্সের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, “ওরা আমাদের প্রিয়জনকে দ্বিতীয়বার জীবন দিয়েছে। ওরা ছিল সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ, তবু ওদের সাহস ও মানবিকতা চিরকাল আমাদের প্রার্থনায় থাকবে।”
অভিজিৎ ও আজীশের কাছে এই অভিজ্ঞতা এক অন্যরকম জীবনের সূচনা। নতুন কর্মজীবনের প্রথম দিনেই তাঁরা বুঝে গেলেন—কোনও হাসপাতালের চার দেওয়ালের মধ্যেই নয়, মানবতার আসল কাজ হয় কখনও কখনও আকাশের বুকে, যেখানে সময়, জায়গা বা সুযোগের সীমা থাকে না—শুধু থাকে একটাই বোধ, “এখনই বাঁচাতে হবে।”
