তামিলনাড়ুর ওড়ানথুরাই গ্রাম শুধু দেশের নয়, গোটা এশিয়া মহাদেশের স্মার্ট গ্রামের তকমা পেয়েছে। এখানে এমন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যা একটা স্মার্ট সিটি-তে পাওয়া যায়। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক টিম এই গ্রাম পরিদর্শন করেছে এবং এখানকার অপ্রত্যাশিত উন্নয়ন চাক্ষুষও করেছে।
আরও পড়ুনঃ বলুন তো কোন ‘দেশে’ সবচেয়ে বেশি নিরামিষভোজী মানুষ বাস করেন? উত্তর শুনলে চমকে যাবেন!
advertisement
নীলগিরি পর্বতে অবস্থিত ওড়ানথুরাই গ্রাম। সারা বিশ্বের মানুষ এখানে আসেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক টিমের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারও এই গ্রাম পরিদর্শনে গিয়েছে। এখানকার পরিবর্তন চাক্ষুষ করেছে। আর যেভাবে এই গ্রামে উন্নয়ন হয়েছে, তা গোটা দেশেই লাগু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাত্তূর জেলা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামের বাসিন্দারাও বেশ সুখী এবং সন্তুষ্ট।
অনেকেই অবাক হয়ে যাবেন এটা জেনে যে, কয়েক বছর আগেও কিন্তু গ্রামের ছবিটা এমন ছিল না। সেখানে প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা পর্যন্ত মিলত না। পরিশ্রুত পানীয় জল এমনকী বিদ্যুৎও পৌঁছয়নি গ্রামে। কিন্তু আজ সেই গ্রামই সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। প্রতিটি বাড়িতে সোলার প্যানেল ইনস্টল করা রয়েছে। যা পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ জোগান দিচ্ছে।
এই গ্রামের প্রায় সমস্ত বাড়ি একই রকম দেখতে। যা গ্রামের সৌন্দর্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন জলের জন্য গ্রামে নলকূপ বসানো হয়েছে। আর পরিচ্ছন্নতার জন্য পর্যাপ্ত বন্দোবস্তও রয়েছে। তবে ওই গ্রামের আমূল পরিবর্তনের পিছনে রয়েছেন এক ব্যক্তি। তিনি হলেন আর শানমুগাম। তিনি এই গ্রামকে মডেল ভিলেজ বানানোর কথা ভেবেছিলেন। আর সেটা করেও দেখিয়েছেন। এখন গ্রামে কুঁড়েঘরের দেখা মিলবে না, কারণ কেন্দ্রের গ্রিন ইন্ডিয়া স্কিমের আওতায় সকল গ্রামবাসীর জন্য তৈরি করা হয়েছে পাকা বাড়ি।
প্রথম বারের জন্য এই গ্রামে বায়ুশক্তি প্রকল্প চালু হয়েছিল। প্রায় ১.৫ কোটি টাকা লোন নিয়ে ৩৫০ কিলোওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। যা প্রতি বছর ৬ লক্ষ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এর মধ্যে ২ লক্ষ ইউনিট বিক্রি করা হয় তামিলনাড়ু ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের কাছে। এর ফলে গ্রাম পঞ্চায়েত বার্ষিক ১১ লক্ষ টাকা আয় করে।
জলের সমস্যাও মেটানো হয়েছে। প্রথমে নলকূপ পরিশ্রুত করা হয়। জলের ট্যাঙ্ক বসাতে কেন্দ্রের কাছ থেকে সাহায্যও নেওয়া হয়। ৯০ শতাংশ অর্থ এসেছিল কেন্দ্রের কাছ থেকে আর বাকি টাকা দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। এরপর ১৩ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। যাতে গ্রামের প্রতিটি ঘরে পরিশ্রুত জল পৌঁছে যায়।
এমনকী গ্রামে ছিল না স্কুলও। অথচ সেই গ্রামে আজ স্কুলের পাশাপাশি কলেজও রয়েছে। জল, ভাল রাস্তা, এনার্জি, কর্ম সংস্থান – এই সব কিছুই এখন এই গ্রামের মানুষের পরিচয় হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে এখানে এসেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক টিম। তারা গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে। এদিকে সরকারের তরফে এই গ্রামকে ‘মডেল ভিলেজ’-এর তকমা দেওয়া হয়েছে।