ঢাকা: বাংলাদেশে স্তব্ধ রেল পরিষেবা। মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে নেমেছেন ট্রেন চালক এবং কর্মীরা। ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে অনড় তাঁরা। রেললাইনে ট্রেন রেখেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। দেশ জুড়ে চলছে অচলাবস্থা।
‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবসরের পর ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার দাবি জানিয়েছেন রেল কর্মীরা। এই নিয়ে সোমবার রেল কর্তা ও চালক ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়। কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র বের হয়নি। এরপরই দেশ জুড়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে নামেন ট্রেন চালকরা।
advertisement
বৈঠকের পর বাংলাদেশ রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদ মাহবুব চৌধুরী ‘দ্য ডেইলি স্টার’-কে জানান, “ইউনিয়নের নেতারা নিজেদের দাবিতে অনড় ছিলেন। আলোচনা শেষ না করেই বৈঠক ছেড়ে চলে যান।“
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, “কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। তাই দেশব্যাপী ধর্মঘট শুরু হয়েছে। সব ধরনের ট্রেন, যার মধ্যে মালগাড়ি ও তেলবাহী ট্রেনও রয়েছে, এই ধর্মঘটের আওতায় পড়বে।“
ইউনিয়নের নেতারা জানিয়েছেন, মধ্যরাতের পর নতুন কোনও ট্রেন চলবে না। যে ট্রেনগুলি ইতিমধ্যেই চলাচল করছে, সেগুলোকে ধর্মঘটের আওতায় ধরা হবে না। উল্লেখ্য, প্রতিদিন ৩৫০-এর বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে ১০০-এর বেশি ইন্টারসিটি এবং ৩০টির বেশি মালবাহী ট্রেন রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফে জানানো হয়েছে, লোকবল কম হওয়ায় ট্রেন চালক থেকে শুরু করে সহকারী (লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার), গার্ড, টিকিট চেকারদের প্রায় প্রতিদিনই ওভারটাইম করতে হয়। তবে ওভারটাইমের জন্য বাড়তি টাকাও দেওয়া হয়।
২০২১ সাল পর্যন্ত ওভারটাইমের ভিত্তিতে পেনশন সুবিধা পেতেন রেলকর্মীরা। কিন্তু ২০২১-এর নভেম্বরে আওয়ামি লিগ সরকার অতিরিক্ত কাজের জন্য পেনশন সুবিধা বন্ধ করে দেয়। এর প্রতিবাদে ২০২২ সালে ধর্মঘটে নামেন কর্মীরা। এপ্রিল মাসে রেল মন্ত্রক হস্তক্ষেপ করে। এবং এই সুবিধা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু অভিযোগ, কাজের কাজ হয়নি। এখন এই সুবিধা ফিরিয়ে আনাই তাঁদের প্রধান দাবি। ট্রেন চালকরা জানিয়েছেন, ২০২১-এর নভেম্বরের আদেশ বাতিল করতে হবে।
কারণ আশ্বাস দেওয়ার পরেও ২০২২ সালে কাজে যোগ দেওয়া নতুন সহকারি লোকোমাস্টারদের এই সুবিধা দেওয়া হয় না। তাঁদের নিয়োগপত্রেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, চাকরির মেয়াদে বা অবসরের পর কোনও অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে না।
গত বছরের ডিসেম্বরে ধর্মঘটে নেমেছিলেন লোকোমাস্টাররা। তাঁরা ওভারটাইম ডিউটিও বন্ধ করে দেন। তাঁদেরও দাবি, ২০২১ সালের গেজেট বাতিল করতে হবে। পরে, রেল কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।