এ হেন এক পরিস্থিতিতেই ঋষিদের পরামর্শে মিথিলার ধার্মিক প্রজাপালক রাজা জনক প্রবৃত্ত হলেন এক মহাযজ্ঞ। অবশ্য শুধু যজ্ঞই নয়, ঋষিদের পরামর্শে তাঁকে নিজে হাতে করতে হবে হলকর্ষণও, তবেই বন্ধ্যা ভূমি পুনরায় ঊষর হয়ে উঠবে। ঋষিরা ঘোষণা করেছিলেন বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে সেই মহাযজ্ঞে প্রারম্ভ হোক! আর রাজা হলকর্ষণ করবেন পুণ্য নবমী তিথিতে। সেই মতো রুক্ষ ভূমিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দুই বিশাল বৃষ, তাঁদের শৃঙ্গ-দেহ চর্চিত হয়েছে চন্দনে-সিঁদুরে; গলায় দেওয়া হয়েছে মঙ্গলমালা। রাজা জনক যথাসময়ে সেই বৃষদের সাহায্যে শুরু করলেন হলচালনা, রুক্ষ ভূমির বুকে বসে যেতে থাকল লাঙলের দাগ, উড়তে থাকল ধুলো।
advertisement
কিন্তু আচমকাই সেই ধুলোর ঝড়ের মধ্যেও বুঝতে পারলেন রাজা- একটা কিছুতে ঠেকে গিয়েছে লাঙল, আর এগোনো যাচ্ছে না। অতঃপর হলকর্ষণ বন্ধ করে শুরু হল মাটি খোঁড়া। আর দেখতে দেখতে পাওয়া গেল পেটিকায় শয়ান এক অপূর্ব সুন্দরী কন্যা। নিঃসন্তান জনকের গৃহে সেই কন্যা নিয়ে এল আনন্দ, রাজ্যে নিয়ে এল বর্ষণ আর উর্বরতা। লাঙলের দাগকে বলা হয় সীতা আর একেও পাওয়া গিয়েছে সেই দাগের মুখে, তাই সীতা নামটাই সাব্যস্ত হল। জনকের কন্যা বলে জানকী এবং মিথিলার রাজকন্যা বলে মৈথিলী নামেও তাঁকেও চিনলেন সবাই! আজ সেই পুণ্যতিথি, মাতা সীতার জন্মজয়ন্তী। নবমী তিথি শাস্ত্রমতে শুরু হচ্ছে ২০ মে দুপুর ১২টা ২৫ মিনিট থেকে, শেষ হবে ২১ মে সকাল ১১টা ১০ মিনিটে। কিন্তু জনকের হলকর্ষণ এবং সীতাপ্রাপ্তির সূত্রে মায়ের আরাধনার পুণ্যলগ্ন ২১ মে সকাল ১১টা ১৭ মিনিট থেকে দুপুর ১টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত।
বলা হয়, এই পূজা বৈবাহিক জীবনে সুখ নিয়ে আসে। স্বামী দীর্ঘ আয়ু লাভ করে থাকেন। আবার, কুমারী নারীরা এই ব্রত উদযাপন করলে পছন্দমতো স্বামীলাভ করেন বলে বিশ্বাস!
কী ভাবে উপাসনা করতে হয় মাতা সীতার?
অষ্টমী তিথিতে সকালবেলা স্নান সেরে নিয়ে সারা দিন শুদ্ধাচারে উপবাস রক্ষা করতে হয়। মাতা সীতার পছন্দের রং হলুদ, তাই এই দিনটির সন্ধ্যা পূজায় হলুদ রংকে প্রাধান্য দিতে হয়। সীতা-রামের ছবি বা মূর্তির কপালে দিতে হয় হলুদ এবং চন্দনের ফোঁটা। এর পর সীতা মাতাকে নিবেদন করতে হয় হলুদ ফুল, হলুদ বস্ত্র, সিঁদুর সহ শৃঙ্গারের ষোলটি সামগ্রী। সব শেষে দীপ এবং ধূপে আরতি করতে হয় দেবদম্পতির।