বৈষ্ণব মতে সারা বছরে যে একাদশী ব্রত পালনের বিধান রয়েছে, সেই চক্রটি শুরু হয় আজকের দিন থেকে, তাই তিথিটিকে প্রথমা একাদশীও বলা হয়ে থাকে। একাদশী তিথির মধ্যে সর্বাধিক মহিমাময় এই তিথি, তাই এর পরিচিতি মহা একাদশী নামেও। আবার, এই একাদশী তিথিতেই নিদ্রালীন বিষ্ণুর নাভিপদ্মে আবির্ভূত হয়েছিলেন ব্রহ্মা, সেই ঘটনা স্মরণে রেখে একে পদ্ম একাদশীও বলা হয়ে থাকে। ভবিষ্যোত্তর পুরাণ মতে স্বয়ং কৃষ্ণ এই শয়নী একাদশী ব্রতকথার মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করেছিলেন যুধিষ্ঠিরের কাছে, জানিয়েছিলেন আজকের দিনে কী করতে নেই! তেমনই আবার এই ব্রতে কী কর্তব্য, সে কথা ব্রহ্মাও ব্যাখ্যা করেছিলেন মানসপুত্র নারদের কাছে।
advertisement
শয়নী একাদশী তিথির পুণ্যলগ্ন:
শয়নী একাদশী তিথি শুরু হচ্ছে ২০ জুলাই সকাল ৯টা ৫৯ মিনিট থেকে, শেষ হচ্ছে ২০ জুলাই ৭টা ১৭ মিনিটে। এর পরে শুরু হয়ে যাবে শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথি। শয়নী একাদশী ব্রতের পারণকাল ২১ জুলাই সকাল ৫টা ৩৬ মিনিট থেকে সকাল ৮টা ২১ মিনিট পর্যন্ত। পারণকাল মানে উপবাস ভঙ্গের সময়। যে কোনও ব্রতেরই একটি নির্দিষ্ট পারণকাল থাকে। সেই অনুসারে যাঁরা শয়নী একাদশী ব্রত রেখেছেন, তাঁরা এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কেবল উপবাস ভঙ্গ করবেন, অন্য সময়ে নয়।
শয়নী একাদশী ব্রতের পূজা পদ্ধতি:
১. সকালে তিল এবং দূর্বামিশ্রিত জলে স্নান সেরে শুদ্ধবস্ত্রে ব্রত পালনের সঙ্কল্প করতে হবে।
২. এর পর ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি বা ছবির সামনে একটি প্রদীপ জ্বেলে দিতে হবে।
৩. ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি বা ছবি মুড়ে দিতে হবে একটি হলুদ রঙের নতুন কাপড়ে।
৪. তুলসী, ফুল, চন্দন, পান, সুপারি এবং ইচ্ছা মতো ভোগ নিবেদন করতে হবে ভগবান বিষ্ণুকে।
৫. সারা দিন বিষ্ণুর নামগান সঙ্কীর্তন করতে বা শুনতে হবে।
৬. রাতে ঘুমানো চলবে না।
৭. পরের দিন পারণের সময়ে ব্রাহ্মণকে দান করে ব্রত এবং উপবাস ভঙ্গ করতে হবে।
বিষ্ণুকে প্রসন্ন রাখতে আজ কী করতে নেই:
১. শয়নী একাদশীতে অন্নগ্রহণ এবং আমিষ আহার নিষিদ্ধ, পরিবর্তে অন্য কিছু খাওয়া যেতে পারে। তেমনই দানাশস্যজাতীয় খাদ্যভক্ষণও শাস্ত্রসম্মত নয়।
২. এই দিন যথাসম্ভব শান্ত ভাবে থাকতে হয়, নিজের আবেগ সংযত রাখতে হয়।
৩. এই দিনটিতে ব্রহ্মচর্য পালন বাঞ্ছনীয়, অর্থাৎ ব্রত রাখলে শারীরিক সঙ্গমে রত হওয়া উচিৎ নয়।
৪. শয়নী একাদশী তিথিতে কাউকে কটূ কথা বলা উচিৎ নয়, কারও সঙ্গে সংঘর্ষে যাওয়াও উচিৎ নয়।
৫. এই দিনটিতে সায়ংকালে অর্থাৎ সন্ধ্যাবেলায় ঘুমানো উচিৎ নয়।