তবে ডিজিটাল ক্ষেত্রে এই বিপজ্জনক ট্রেন্ডগুলির কারণে অনেকেই FOMO-তে ভোগেন। এতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের ভাল থাকাটাও ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে ৩২ বছর বয়সী মারিয়ানা বারুতকিনার কথাই। এই যুবতী একজন ইনফ্লুয়েন্সার।
মারিয়ানা আদতে রাশিয়ার বাসিন্দা। সম্প্রতি নিকি মিনাজের ১২ বছরের পুরনো পোজ রিক্রিয়েট করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। নিকির এই পোজ আবার ইন্টারনেটে স্টিলেটো চ্যালেঞ্জ নামে জনপ্রিয়। এই ভাইরাল ট্রেন্ডটি আসলে কী। এই চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে উঁচু হিলের স্টিলেটো জুতো পরতে হয় পায়ে। তারপর অস্বাভাবিক বস্তু, কিংবা অস্বাভাবিক কোনও জায়গায় বসে ব্যালেন্স রক্ষা করতে হয়। অস্বাভাবিক বস্তু বা জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা হয় সোডার ক্যান, ছোট কোনও বসার জায়গা, বাক্স, মই, ডাম্বেল অথবা কোনও ঝর্ণা বা জলের ধারা।
এদিকে সদ্য মা হয়েছেন মারিয়ানা। তিনি স্টিলেটো চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। যদিও সেটা ঠিক মতো সফল হয়নি। আসলে মারিয়ানা নিজের রান্নাঘরের কাউন্টার টপে স্টিলেটো পরে একটি প্যানের উপর বেবি ফর্মুলার কৌটোর উপর বসে ব্যালেন্স রক্ষার চেষ্টা করছিলেন। কয়েক সেকেন্ড সেই চ্যালেঞ্জ রিক্রিয়েশন করার পরেই মারিয়ানার চোখে-মুখে হঠাৎই ফুটে ওঠে আতঙ্কের ছাপ। আসলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পিছলে সজোরে আছাড় খেয়ে পড়েন মারিয়ানা। যার জেরে তাঁকে ছুটতে হয়েছে হাসপাতালেও। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে, শিরদাঁড়া ভেঙে গিয়েছে ওই যুবতীর। যদিও এটাই কিন্তু প্রথম কোনও বিপজ্জনক ইন্টারনেট চ্যালেঞ্জ নয়। তাই জেনে নেওয়া যাক আরও কিছু ভাইরাল এবং বিপজ্জনক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে।
কিকি চ্যালেঞ্জ:
নেটিজেনদের হয়তো মনে থাকবে – ‘কিকি, ডু ইউ লাভ মি’-র কথা। এই চ্যালেঞ্জে আচমকাই চলন্ত গাড়ি থেকে নেমে ‘কিকি, ডু ইউ লাভ মি’ গানে নাচতে শুরু করছিলেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। চলতে চলতে এগোতে থাকে গাড়ি আর তার পাশেই নাচতে নাচতে এগোতে থাকেন ট্রেন্ডে গা ভাসানো নেটাগরিকও। এই ভাইরাল চ্যালেঞ্জের জেরে প্রচুর দুর্ঘটনাও ঘটে গিয়েছে। সারা বিশ্বের পুলিশদের এ নিয়ে সতর্কতাও জারি করতে হয়েছিল। কারণ এই চ্যালেঞ্জের জেরে ট্র্যাফিক নিরাপত্তাও ব্যাহত হচ্ছিল। গোটা বিশ্ব জুড়ে ঘটেছিল দুর্ঘটনাও।
টাইড পড চ্যালেঞ্জ:
একটা ডিটারজেন্ট ক্যাপসুল গিলে ফেললে কী কী হতে পারে? ইন্টারনেট একটি চ্যালেঞ্জের নাম দিয়েছিল টাইড পড চ্যালেঞ্জ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চাদেরই দেখা যেত যে, তারা টাইড পডে কামড় বসাচ্ছে। এরপর তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে ডিটারজেন্ট। এমন বহু মানুষ, যাঁরা এই চ্যালেঞ্জে গা ভাসিয়েছিলেন, তাঁদের ডায়েরিয়া, গা গোলানো এবং বমির মতো সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো প্রাণহানির খবরও পাওয়া গিয়েছিল।
ককরোচ অন ফেস চ্যালেঞ্জ:
এটা হয়তো খুব বিপজ্জনক ইন্টারনেট চ্যালেঞ্জ নয় ঠিকই, তবে মুখের উপর আরশোলা ঘুরে বেড়ানো কিন্তু বেশ ভয়ঙ্কর বিষয়। ফেসবুকে এই ভাইরাল চ্যালেঞ্জের সূচনা ঘটেছিল অ্যালেক্স অংয়ের হাত ধরে। যেখানে ডেয়ার বা টাস্ক দেওয়া হত। চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারীদের মুখে জীবন্ত আরশোলা রেখে দিয়ে তার সেলফি তুলতে বলা হত ওই চ্যালেঞ্জে। এমনকী অ্যালেক্স নিজেও নিজের এমন একটি ছবি পোস্ট করে এই ট্রেন্ডে গা ভাসানোর জন্য অন্যদেরও উৎসাহ দিয়ে ইন্টারনেটে এই চ্যালেঞ্জটিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
স্কাল ব্রেকার চ্যালেঞ্জ:
এই চ্যালেঞ্জটা শুধু নিষ্ঠুর বা নৃশংস প্রকৃতিরই নয়, এটা কিন্তু ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। অস্বাভাবিক ধরনের এই চ্যালেঞ্জে তিন জন অংশগ্রহণকারীকে পাশাপাশি সারিতে দাঁড়াতে হয়। এরপর মাঝে থাকা অংশগ্রহণকারী লাফ দেন আর তাঁর দুদিকে থাকা দুই অংশগ্রহণকারী মাঝের জনের পায়ে লাথি মারেন। যার ফলে পড়ে যান মাঝখানে থাকা অংশগ্রহণকারী। এই ঝুঁকিবহুল স্টান্টের ফলে মাঝে থাকা ব্যক্তি আছাড় খেয়ে চিৎ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। ফলে তাঁর মাথাতেও কিন্তু গভীর চোট লাগার আশঙ্কা থেকে যায়।
আউটলেট চ্যালেঞ্জ:
এই চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে অশংগ্রহণকারীরা আংশিক ভাবে একটি ফোন চার্জারকে একটি ওয়াল সকেটের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেন। এরপর সেই ফাঁকা স্থানে একটি কয়েন রাখেন, যাতে বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দমকল বিভাগকে এই কারণে তলবের মুখেও পড়তে হয়েছে।