আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নন্দিনী বেছে নিয়েছিলেন একেবারে হাতে বোনা দুর্ধর্ষ পোশাক। আর নন্দিনীর এই পোশাকটি তৈরি করেছেন পুরস্কার-বিজয়ী টেক্সটাইল এবং ফ্যাশন ডিজাইনার গৌরাঙ্গ শাহ। ফলে হাতে বোনা এই পোশাকটিতে ফুটে উঠেছে ঐতিহ্য এবং সূক্ষ্ম কারিগরির মেলবন্ধন। মূলত ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের জামদানি বুননের এক অনন্য ফিউশনই প্রদর্শন করা হয়েছে।
advertisement
বয়নশিল্পের মাধ্যমেই তুলে ধরা হল দুই রাজ্যের কাহিনি: গৌরাঙ্গ শাহের এই সৃষ্টি কিন্তু সাধারণ কস্টিউম নয়। গরিমার সঙ্গেই যেন বোনা হয়েছে সেই বয়নশিল্পের কাহিনি। যেখানে দুই প্রাদেশিক কারুশিল্পের জামদানি যুগলবন্দিই ফুটে উঠেছে। এটি ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ ঐতিহ্যের ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর কাছে গৌরাঙ্গ জানান যে, বেস ফেব্রিক বা প্রাথমিক ফেব্রিক হল চরকায় বোনা খাদির সুতো। সূক্ষ্ম ভাবে সেই সুতোর সঙ্গে লেহরিয়া প্যাটার্নে জামদানি গোল্ড জরির একটা মিশেল তৈরি করা হয়েছে। আর এই বিশেষ পোশাকের মূল অংশ হল – দুর্দান্ত ভাবে ডিজাইন করা চওড়া পাড়ের অংশ এবং পাল্লা বা আঁচল। তাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী Bangdi Mor মোটিফ। আর এই মোটিফটিতে আসলে স্থান চেয়েছে একটি চুড়ির ভিতর নৃত্যরত চারটি ময়ূর। আইভরি রঙা জমির উপর গোল্ড জরি যেন একটা জমকালো ব্যাপার যোগ করেছে। যা থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে সৌন্দর্য এবং রাজকীয়তা। প্রসঙ্গত Bangdi Mor মোটিফটি বরাবরই ভারতীয় লোকশিল্পের অঙ্গ।
তিন বছরের পরিশ্রমের ফসল: কারিগরদের তিন বছরের পরিশ্রমের ফলে প্রাণ পেয়েছে এই পোশাকটি। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের আট বয়নশিল্পীর দল এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। ফলে যখন মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নন্দিনী এবং তাঁর টিম একটি ডিজাইনের সন্ধানে গৌরাঙ্গের দ্বারস্থ হন, তখন ডিজাইনার নিজেই তাঁর মাস্টারপিসটি তাঁদের সামনে তুলে ধরেন।
সৌন্দর্য এবং বুদ্ধির প্রতিমূর্তি নন্দিনী গুপ্তা: ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্থানের কোটায় জন্ম নন্দিনী গুপ্তার। সেখানকার সেন্ট পলস সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে নিজের স্কুলের পাঠ সম্পন্ন করেছেন তিনি। এরপর মুম্বইয়ের লালা লাজপত রাই কলেজ থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। নন্দিনীর বক্তব্য, প্রয়াত শিল্পপতি রতন টাটাই হলেন তাঁর আদর্শ। শ্রদ্ধেয় রতন টাটার লিডারশিপ এবং জনকল্যাণমূলক কাজই তাঁকে অনুপ্রেরণা জোগায়।
ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া ২০২৩-এর খেতাব উঠেছিল নন্দিনীর মাথায়। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর উত্থান। প্রতিযোগিতার মঞ্চে নিজের বুদ্ধিমত্তা, আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক অঙ্গীকারের মাধ্যমে বিচারকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। এবার মিস ওয়ার্ল্ড ২০২৫-এর খেতাবের জন্য বিশ্বব্যাপী ১১০ জন প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন তিনি। তারই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের জাতীয় পতাকা হাতে গরিমার সঙ্গে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন নন্দিনী। বিশ্বের আসনে ভারতের ঐতিহ্য, কারুশিল্প এবং সৌন্দর্য সম্পর্কে একটি দৃষ্টান্তও স্থাপন করলেন।