বর্তমানে যে মহাকুম্ভ মেলা চলছে, তা দেশবাসীর সামনে আধ্যাত্মিকতার একের পর এক নজির নিয়ে এসেছে। দেখা মিলেছে তপস্বী এবং তপস্বিনীদের যাঁরা ভোগবিলাসের জীবন ত্যাগ করে সন্ন্যাসে মন সমর্পণ করেছেন। আসছেন বহু বিদেশিও অতুল্য এই ভারতের মহিমা দুই চোখ ভরে দেখতে। তবে, প্রয়াগের কুম্ভে বিদেশিদের আগমন নতুন কোনও ঘটনা নয়। হিন্দু ধর্ম যেমন সনাতন, তেমনই সুপ্রাচীন কাল থেকে এই ভূমি শুধু তিন নদীর নয়, বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গমক্ষেত্রও হয়ে উঠেছে। যাঁদের মধ্যে সপ্তম শতাব্দীতে হিউয়েন সাং-এর বিবরণ অন্যতম উল্লেখযোগ্য। ব্রিটিশরাও এই কুম্ভ মেলা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেননি, তাঁদের নজরদারিতে ১৮৭০ সালে কুম্ভ মেলার আয়োজন হয়েছিল। এবার, এই ২০২৫ সালে যখন আরেক ব্রিটিশ এসে হাজির হলেন মহাকুম্ভে, কোন চোখে তিনি উপলব্ধি করলেন এর মাহাত্ম্য?
advertisement
সে কথায় আসার আগে এই ব্রটিশের পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন। তিনি ড. ইতিয়েল দ্রর। লন্ডন থেকে মহাকুম্ভের সাক্ষী থাকতে ভারতে এসেছেন তিনি। বলে রাখা ভাল যে এই ড. ইতিয়েল দ্রর পেশায় স্নায়ুবিজ্ঞানী। মহাকুম্ভে এসে যা তাঁর সবথেকে বেশি মন কেড়েছে তা হল মাটির ভাঁড়ে চা। এটা ঠিক যে আমরা ভারতীয়রা যে ভাবে দুধ, চিনি, চা পাতা ফুটিয়ে, দারচিনি, এলাচের মতো মশলা দিয়ে চা বানাই, ব্রটিশরা সেভাবে চা খায় না। তবে ড. ইতিয়েল দ্রর স্বীকার করেছেন অকুণ্ঠে যে ভারতীয় চা-ই সবচেয়ে ভাল!
এখানেই শেষ নয়। ‘মহাকুম্ভের আয়োজন খুবই চমৎকার। এর অনুভূতি বুঝতে এখানে এসেছি। এটা অবিশ্বাস্য. এখানকার যুবকরা এখনও তাঁদের সাংস্কৃতিক শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত এবং সেই শক্তিতে পরিপূর্ণ, বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে সমালোচনা করেছেন ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের। কিছুটা আক্ষেপের সঙ্গেই তিনি এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন যে একদা ভারতের সম্পদ শোষণের জন্য কীভাবে ব্রিটিশ রাজ রেলপথ তৈরি করেছিল।
এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রয়াগরাজের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কথাও। এই প্রসঙ্গে ড. ইতিয়েল দ্রর বলেছেন যে তিনি তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলার মতো যথেষ্ট জানেন না, তবে এখানে যে মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়েছে তাঁদের উদ্যোগে তা দুর্দান্ত বলেই অভিমত তাঁর। পাশাপাশি, আরও বলেছেন যে তিনি ভারতের জনতার সঙ্গে দেখা করতে সর্বদাই পছন্দ করেন। তিনি ৬০-৭০টিরও বেশি দেশ ঘুরেছেন, তবে তিনি ভারতকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন।