TRENDING:

Opinion: বাস্তব জীবনে ঐতিহ্যবাদ অভিশাপ না কি আশীর্বাদ? উত্তরাখণ্ডের লিভ-ইন আইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ কলকাতার আইনজীবীর

Last Updated:

গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় উত্তরাখণ্ড কোড পাশ হয়েছিল। এটি ভারতের প্রবীণ এবং আধুনিক যুগের নাগরিকদের মধ্যে চর্চার একটি বিষয় হয়ে উঠেছে।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
Debopriya Sarkar : Advocate, Calcutta High Court (BA.LLB.LLM)
Debopriya Sarkar : Advocate, Calcutta High Court (BA.LLB.LLM)
advertisement

দেবপ্রিয়া সরকার, আইনজীবী, কলকাতা হাই কোর্ট (BA.LLB.LLM)

কলকাতা: ইউনিফর্ম সিভিল কোড (UCC)-র উত্তরাখণ্ড সংস্করণ কীভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার সুপারিশ জমা করার আগে ভারতের ২২তম আইন কমিশনকে সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় উত্তরাখণ্ড কোড পাশ হয়েছিল। এটি ভারতের নবীন-প্রবীণ মানুষদের মধ্যে চর্চার একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। আর এটিই দেশের প্রথম রাজ্য, যা নির্দিষ্ট ব্যবস্থার জন্য কঠোর আইন প্রতিষ্ঠা করেছে।

advertisement

এই আইনটি এমন ভাবে লিভ-ইন সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করছে, যেখানে বলা হচ্ছে যে, লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একজন পুরুষ এবং মহিলা বিবাহ পরবর্তী জীবনের মতো একটি বাড়িতে একসঙ্গে বসবাস করেন। নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলি যুক্তি দিয়ে জানিয়েছে যে, এই আইনের ব্যাখ্যা একাধিক দিক থেকে সকলকে অস্বস্তিতে ফেলছে। সংশ্লিষ্ট আইনের ব্যাখ্যাগুলির মধ্যে অন্যতম হল সঙ্গী বা পার্টনারের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক, আর যাঁরা সেটা করতে ব্যর্থ হবেন, তাঁদের শাস্তি এবং সঙ্গীর বয়স একুশের নীচে হলে তাঁর মা-বাবাকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো।

advertisement

আরও পড়ুন- রোগা বলে হীনম্মন্যতা? সব ছেড়ে কলা কাজে লাগান এই ভাবে, পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তারবাবু

গত বছরের একটি LGBTQ+ অধিকার মামলায় ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় রাজ্যগুলিকে প্রকৃত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করার জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের সম্মতির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের এক সিদ্ধান্তে সুপ্রিম কোর্টের একটি পৃথক বেঞ্চ রায় দিয়েছে যে, সঙ্গী পছন্দ করার বিষয়টা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিটি মানুষের মৌলিক গোপনীয়তার মধ্যেই পড়ে। যা অবিচ্ছেদ্য। যদিও উত্তরাখণ্ডের আইনে বলা হয়েছে যে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে যদি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ লিভ-ইন সম্পর্কে থাকেন, তাঁদের তিন মাস জেলে কাটাতে হবে। সেই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাও গুনতে হবে। এর পাশাপাশি রেজিস্ট্রারের বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই লিভ-ইন সঙ্গীরা যদি নিজেদের সম্পর্ক রেজিস্ট্রেশন না করেন, তাহলে তাঁদের ৬ মাসের কারাবাসের সম্মুখীন হতে হবে। এমন কী ২৫,০০০ টাকা জরিমানাও দিতে হতে পারে। উত্তরাখণ্ড কোড কিন্তু এখনও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়নি।

advertisement

কোডটি এই বিষয়ে আরও জটিলতা এবং কঠোরতা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের মুক্ত নাগরিক এবং নাগরিক অধিকার সংস্থা উভয়ই মনে করছে যে, এই আইনটি ভীষণ ভাবেই অযাচিত। আর তা অনধিকার ভাবে সম্পর্কের মধ্যে প্রবেশ করছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তরফে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমস্ত বয়সের নাগরিকদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গিয়েছে:

advertisement

এই ধরনের মনোযোগ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় না:

মোটামুটি ভাবে ১৮-২৬ বছর বয়সীদের প্রশ্ন করা হলে তাঁরা প্রায় সকলেই জানান, এই রায় তাঁদের উপর চাপ ফেলছে। তাঁদের বক্তব্য, কোনও যুগলের সুরক্ষার পরিবর্তে তাঁদের মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি – এটাই যেন আইনের মূল উদ্দেশ্য। অসামঞ্জস্যের কারণে আজকাল বহু বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু সম্পর্ক না ভাঙলেও তাতে অশান্তির মেঘ ঘনাচ্ছে। হিংসা-নিগ্রহও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিয়ে করার আগে সঙ্গীকে ভাল করে জানার ক্ষমতা যদি বাদ দেওয়া হয়, তা হলে সমস্যা কমার পরিবর্তে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাবে।

Debopriya Sarkar, Advocate Calcutta High Court (BA.LLB.LLM)

মহিলাদের ভূমিকা সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে:

এক্ষেত্রে যাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাঁদের বয়স ৩০ বছরের মধ্যেই। তাঁদের বক্তব্য, এই রায় অত্যন্ত নারীবিদ্বেষী। নারী অধিকার সংগঠনগুলি নির্দিষ্ট কর্মসূচি পালন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে মহিলাদের সঠিক ভাবে সম্মান জানানোর বিষয়টা গ্রাম এবং শহরতলি এলাকার মানুষদের শেখানো হচ্ছে। এই ধরনের প্রয়াস খুবই নগণ্য টাকায় স্বল্প পরিসরেই পরিচালনা করছে কিছু এনজিও। সামাজিক শিক্ষা হল আমাদের পুরনো ঐতিহ্যের একটি অপরিহার্য উপাদান। তা বৃদ্ধির পরিবর্তে এই ধরনের সীমা সমাজের কোনও অংশকে উপকৃত করবে না। এটি আর একটি রাজনৈতিক মুখোশ হিসেবে থাকবে।

আরও পড়ুন– পরিবারের অমতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন এই অভিনেত্রী, সম্পত্তির পরিমাণ জানলে চমকে যাবেন !

যাঁদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশেরই বিশ্বাস, সরকারের সঙ্গে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন ভাগ করে নেওয়ার ফলে ক্ষুদ্র সম্প্রদায়গুলিতে সহিংসতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। মহিলাদের বেশভূষা, শিক্ষা এবং তাঁদের জীবনের অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রচলিত মতামত রয়েছে একাধিক ধর্মীয় এবং সামাজিক সম্প্রদায়গুলির। তাই, গ্রাম এবং শহর উভয় জায়গার ক্ষুদ্র-সম্প্রদায়গুলি স্বাধীন ইচ্ছাকে বাধা দেওয়ার জন্য আরও কারণ খুঁজে পাবে। আর সবথেকে বড় কথা হল, অধিকাংশ বাধাই খুব হিংস্র উপায়ে আসবে।

অস্পষ্টতার ব্যাপক সম্ভাবনা:

এই আইনটি একটি সমালোচনামূলক ধূসর অংশ ব্যাখ্যা করছে। একসঙ্গে বসবাসকারী দু’টি অথবা তার বেশি সংখ্যক মানুষ যে নিশ্চিত ভাবে কোনও সম্পর্কে থাকবেন, তা নয়। আর এই আইনটি একটি বিষয় উত্থাপন করছে, সরকার এখনও বিশ্বাস করে যে, ভিন্ন লিঙ্গের দু’টি মানুষ একসঙ্গে বসবাস করলে তাঁরা অবশ্যই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রয়েছেন। আর এতে সবথেকে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছেন LGBTQIA+ সঙ্গীরা। যার ফলে একসঙ্গে এক ঘরে বসবাসকারীদের অবস্থার ফারাক করা মুশকিল হয়ে যায়। এক ছাদের তলায় বসবাসকারী কোনও যুগলের উপর এই আইনটি বলবৎ করা হলে তাঁরা যে নিরপরাধ, সেটা প্রমাণ করার পথ থাকবে না। উল্টে একাধিক অযাচিত এবং ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির উদ্রেক হবে।

Debopriya Sarkar

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
'আসছে বছর আবার হবে'! দিঘার সমুদ্রে বিলীন দেবী দুর্গা, ঢেউয়ের গর্জনে মিশল বিদায়ের সুর
আরও দেখুন

সংক্ষেপে বলতে গেলে এই আইন সম্পর্কে একটি নয়, একাধিক অমীমাংসিত উদ্বেগ রয়েছে। যা এটিকে আরও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এমনকী যুগান্তকারী তো নয়ই! আইন কমিশন এই জটিল বিবরণ পর্যালোচনা করার জন্য একটি কঠিন কাজের সম্মুখীন হয়েছে। উচ্চ-স্তরের বহু আইনবিদই ব্যক্তিগত ভাবে এই নির্দেশিকাগুলির ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে গোটা দেশের চোখ রয়েছে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের উপরেই। কারণ এই আইন প্রণয়নে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

বাংলা খবর/ খবর/পাঁচমিশালি/
Opinion: বাস্তব জীবনে ঐতিহ্যবাদ অভিশাপ না কি আশীর্বাদ? উত্তরাখণ্ডের লিভ-ইন আইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ কলকাতার আইনজীবীর
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল