স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে এই ময়দান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একদা বাংলা, বিহার, ওড়িশার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্পদশালী রাজধানী মুর্শিদাবাদকে তাদের রাজত্বের কেন্দ্র বিন্দু করতে ভয় পেয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। রাজধানী সরে গিয়েছিল কলকাতায়। পলাশীর যুদ্ধের কয়েক দশক পরে অর্থাৎ ১৭৮৬ সালের ২৫ এপ্রিল স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল মুর্শিদাবাদ।
advertisement
ঐতিহাসিকরা জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদ জেলা থেকেই প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের সুচনা হয়েছিল। ১৮৫৭ সালে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে যে সিপাহী বিদ্রোহ হয়েছিল, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার ছিল সেই মহাবিদ্রোহের সূতিকাগার। ১৮৫৭ সালের ২৬ জানুয়ারি, বহরমপুর ব্যারাক স্কয়ার থেকেই বিদ্রোহের অগ্নিস্ফূলিঙ্গ প্রথমে ব্যারাকপুর, তারপর ধীরে ধীরে গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এনফিল্ড রাইফেলের টোটা সহ ইংরেজদের অন্যায় শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বহরমপুর সেনা ছাউনির কিছু সেনার বিদ্রোহে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যারাকপুর সেনা ছাউনির সিপাহী মঙ্গল পান্ডে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। লড়াইয়ের মাঠে কয়েকজন ইংরেজ সৈন্যকে হত্যা করে শেষে নিজের রিভলভার থেকে নিজের বুকে গুলি করেন তিনি। লুটিয়ে পড়েছিল তাঁর দেহ। সেনা বাহিনীর বিদ্রোহে ভীত ইংরেজরা ভারতীয়দের সবক শেখাতে মঙ্গল পাণ্ডের আহত শরীরকে তুলে নিয়ে গিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়।
বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ারে আজও আছে মঙ্গল পান্ডের মুর্তি। পলাশীর যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার সংলগ্ন ৪০০ বিঘা জমি লিজ নেয় ইংরেজরা। সিরাজ পরবর্তী সময়ে ইংরেজদের তৈরি ক্রীড়নক নবাবদের ওপর লক্ষ্য রাখতে ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের ১২০ বিঘা জমির ওপর তৈরি করা হয় ক্যান্টনমেন্ট। যার নিদর্শন চারিদিকে আজও আছে। বর্গাকার এই ময়দানের চারদিকে রয়েছে চারটি কামান। ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বুকে নিয়ে আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দান।