হরদই: ৯৪ বছর বয়স। সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তবুও ন্যায়বিচারের আশায় কোনওরকমে হাঁটতে হাঁটতে ডিএম অফিসে পৌঁছলেন শিবকরণ দ্বিবেদী। তাঁকে দেখে অবাক ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। কী এমন ঘটেছে, যার জন্য এক বৃদ্ধ মানুষকে এত কষ্ট করে অফিসে আসতে হল? শশব্যস্তে চেয়ার ছেড়ে উঠে যান বৃদ্ধের কাছে। শিবকরণ ক্ষুব্ধ। তিনি আগেও একই অভিযোগ নিয়ে দু’বার এসেছেন, কিন্তু কোনও শুনানি হয়নি।
advertisement
শিবকরণকে প্রথমে চেয়ারে বসান ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। তারপর মন দিয়ে শোনেন তাঁর সমস্ত অভিযোগ। বৃদ্ধ শিবকরণ জানান, তাঁর চাষজমি আছে। কিন্তু গ্রামের প্রভাবশালী কয়েকজন সেই জমি দখল করে নিয়েছে। এই বিষয়ে ৩১ ডিসেম্বর এবং ২৩ জানুয়ারি তিনি অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
শিবকরণ বলেন, “ওদের জ্বালায় আমি তিষ্ঠোতে পারছি না। অথচ লেখপাল আমার অভিযোগ পাত্তাই দিচ্ছে না।“ জমির কাগজপত্রও দেখান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেন ডিএম মঙ্গলা প্রসাদ। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে লেখপাল এবং রাজস্ব কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। তারপর বিলগ্রাম এসডিএম-এর (উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট) সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করে তদন্তের নির্দেশ দেন। এমন ঘটনায় বেজায় ক্ষুব্ধ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। সাধারণ মানুষ কেন হয়রানির শিকার হবেন?
লেখপাল ও রাজস্ব কর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের পাশাপাশি নায়েব তহশিলদার, তহশিলদার ও উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সতর্ক করে দেন তিনি। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এমনটা চলবে না। জানতে চান, কেন বৃদ্ধ দুবার অভিযোগ জানানোর পরেও কোনও শুনানি হয়নি? কেন তাঁকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে? তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এরপর যদি কোনও সাধারণ মানুষের অভিযোগ এভাবে অবহেলিত হয়, তবে কঠোর শাস্তি অনিবার্য।
এরপর বৃদ্ধ শিবকরণকে আশ্বস্ত করেন ডিএম মঙ্গলা প্রসাদ, “আপনাকে আর কোথাও দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। প্রশাসনের একটি দল সরাসরি আপনার বাড়িতে গিয়ে সমস্যার সমাধান করবে।“ একই সঙ্গে জমির সীমানা নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জমির সীমানা সুরক্ষিত রাখতে মাটির ছোট পাঁচিল তোলার অনুমতিও দেন।
ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কথা শুনে চোখে বৃদ্ধ শিবকরণের জল চলে আসে। এতদিনের অবহেলা আর বঞ্চনার পর অবশেষে যেন ন্যায়বিচারের আলো দেখতে পেলেন তিনি। চোখ মুছতে মুছতে ধরা গলায় তিনি বলেন, “আজ আমার আসা সার্থক হল।“ ডিএম বৃদ্ধকে জেলা তথ্য আধিকারিকের গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।