একটা পুরো পরিবার একই গাড়িতে থাকছিলেন। হ্যাঁ, দুই বছর ধরে মসজিদের ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে থাকা এই গাড়িতে স্বামী, স্ত্রী এবং তাদের দুই ছোট সন্তান, যারা পাশের এসকে শ্রী পেরাক স্কুলে পড়ছে, এই ‘বাড়িতেই’ থাকছিলেন। এই বেদনাদায়ক গল্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে, যেখানে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের এই নিষ্ঠুর মুখ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। পরিবার টেমারলোহ, পাহাং প্রদেশ থেকে কুয়ালালামপুর এসেছিল যাতে ভাল জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু চাকরির অভাব, বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতি এবং ভাড়ার চাপ তাঁদের পথে নামতে বাধ্য করেছে। খোলা জায়গায় থাকার থেকে বাঁচার জন্য পরিবার গাড়িকেই তাঁদের বাড়ি বানিয়ে নিয়েছে।
advertisement
ফেডারেল টেরিটরি উম্নো ইনফর্মেশন চিফ দাতুক সুলম মুজফ্ফর গুলম মুস্তাকিমকে কেউ এর তথ্য দিয়েছে। তিনি তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন, যেখানে লেখা ছিল, ‘‘এই পরিবার সম্পূর্ণভাবে তাঁদের গাড়ির উপর নির্ভরশীল। বাচ্চারা স্কুলে যায়, কিন্তু বাড়ির মতো কিছু নেই।’’ দাতুক সুলম জানিয়েছেন যে গাড়িটি অদ্ভূতভাবে কখনও নড়তে দেখা যায়নি, কিন্তু ভিতরে পরিবারের জীবন চলছিল। মসজিদের প্রাঙ্গণে পার্কিং সুবিধা তাদের কিছুটা আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু বৃষ্টির দিনে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। বাচ্চারা স্কুল ইউনিফর্ম পরে যায়, কিন্তু রাত গাড়ির পিছনের সিটেই কাটায়। এই ঘটনা সামনে আসার পর উম্নো বাটু তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ফেডারেল টেরিটরি ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল (মাইভপ) এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং কুয়ালালামপুর সিটি হল (ডিবিকেএল) থেকে ট্রানজিট হাউসের দাবি করেছে।
দাতুক সুলম বলেছেন, ‘‘আমরা একটি ভাড়ার বাড়ি ওদের দেওয়ার চেষ্টা করছি যাতে পরিবারটি কিছুটা আরামে থাকতে পারে এবং শিশুরা শিক্ষার থেকে বঞ্চিত না হয়।’’ মসজিদ কমিটি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যেখানে পরিবারটি মাঝে মাঝে খাবার এবং জল পেয়েছে। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজন। ভাইরাল পোস্টে হাজার হাজার মন্তব্য এসেছে, যেখানে লোকেরা দান করার প্রস্তাব দিচ্ছে। একজন ইউজার লিখেছেন, ‘‘মালয়েশিয়া মতো ধনী দেশে এটি কীভাবে সম্ভব? সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।’’ মালয়েশিয়ায় দারিদ্র্যের এই সমস্যা নতুন নয়। কোভিড-১৯ মহামারীর পর অর্থনৈতিক মন্দা লক্ষ লক্ষ পরিবারকে প্রভাবিত করেছে। একটা রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০২৪ সালে এখানকার ৫.৬% জনগণ দারিদ্র্য রেখার নীচে ছিল, কিন্তু শহুরে এলাকায় ভাড়া এবং শিক্ষার খরচ এই সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। কুয়ালালামপুর মতো ব্যয়বহুল শহরে একটি ছোট ফ্ল্যাটের ভাড়া ১৫০০ রিংগিট (প্রায় ২৮,০০০ টাকা) থেকে শুরু হয়, যা অনেক পরিবারের জন্যেই অসম্ভব। এমন অবস্থায় পরিবারটি গাড়িতে থাকার জন্য বাধ্য হয়েছে।