Success Story: শুরু হয়েছিল বাবার কাছে থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার করে, সাগর-বিনোদের মোমোর দোকান এখন অনুপ্রেরণা-লোভ দুই জাগায়
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
Wow Momo Success Story: এই অনুপ্রেরণামূলক বাণিজ্যিক যাত্রার নেপথ্যে আছে দুই নাম- সাগর দারিয়ানি এবং বিনোদ কুমার হোমাগাই। - ওয়াও! তাঁদের হাতেই Wow! Momo-র জন্ম, তাঁদের আবেগই কোটি কোটি টাকার মোমো সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।
ভোজনরসিকরা তো খেয়ে দেখেছেনই! আর যাঁরা এখনও চেখে দেখেননি, তাঁদেরও যাতায়াতের পথে Wow! Momo-র দোকান চোখে পড়েছেই, পাড়ায় পাড়ায় তা ছড়িয়েছে বললে অত্যুক্তি হয় না। একটি ছোট খাবারের স্টল হিসেবে যা শুরু হয়েছিল তা এখন Quick Service Restaurant (QSR) শিল্পে একটি প্রভাবশালী মুখ হয়ে উঠেছে। এই অনুপ্রেরণামূলক বাণিজ্যিক যাত্রার নেপথ্যে আছে দুই নাম- সাগর দারিয়ানি এবং বিনোদ কুমার হোমাগাই। - ওয়াও! তাঁদের হাতেই Wow! Momo-র জন্ম, তাঁদের আবেগই কোটি কোটি টাকার মোমো সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।
advertisement
দুই ছাত্রের স্বপ্ন: সাগর দারিয়ানি Wow! Momo-র ফুডস প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা, অন্য দিকে, বিনোদ কুমার হোমগাই সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিওও। কলেজজীবন থেকেই এই দুই ছাত্রের ছিল কেবল একটাই স্বপ্ন। দু’জনেই কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক কোর্স সম্পন্ন করেছিলেন, তাঁরা এমন একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে তাঁরা খাবারের প্রতি নিজেদের ভালবাসাকে একটি সমৃদ্ধ ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে পারবেন। সাগরের ব্র্যান্ড তৈরি এবং বিপণনের প্রতি গভীর দৃষ্টি ছিল, বিনোদ উৎপাদন এবং মান নিয়ন্ত্রণের উপরে মনোযোগ দিয়েছিলেন।
advertisement
সাগর বাবার কাছ থেকে ধার করে মাত্র ৩০,০০০ টাকা প্রাথমিক বিনিয়োগে এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করেন যা ভারতের স্ট্রিট ফুডের দৃশ্যপট চিরতরে বদলে দেয়। মোমো কেন বেছে নেন তাঁরা? আসলে, বেশিরভাগ কলেজ স্টুডেন্টের মতো সাগর এবং বিনোদেরও ক্যাম্পাস মোমোর প্রতি যথেষ্ট ভালবাসা ছিল। নেপালি বংশোদ্ভূত বিনোদের মোমোর প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল, অন্য দিকে, সাগর স্কুলের বাইরে মোমো খেয়ে খেয়ে বড় হয়েছিলেন বললে ভুল হয় না। প্রথমে তাঁরা মুম্বইতে একটি বেকারি খোলার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোমোতেই মনোনিবেশ করেন, কারণ বিনোদের মোমো তৈরিতে অনবদ্য প্রতিভা ছিল।
advertisement
তাঁদের প্রথম দোকান? কলকাতার স্পেন্সার্স সুপারমার্কেটে একটি ৬x৬ কিয়স্ক। মাত্র একটি টেবিল, দু’জন পার্টটাইম রাঁধুনি এবং অটল দৃঢ় সংকল্প নিয়ে সাগর এবং বিনোদ নিজেদের উদ্যোক্তা হওয়ার অভিযান শুরু করেন, কৌতূহলী গ্রাহকদের কাছে স্টিমড মোমো বিক্রি শুরু করেন। প্রথম থেকেই অসাধারণ সাড়া পান তাঁরা, যা প্রমাণ করে যে মোমো বাজারে সাফল্যের সম্ভাবনা প্রত্যাশার চেয়েও অধিক।
advertisement
হাত পেতে মাইনে নেওয়ার বদলে আবেগ অনুসরণ: মজার ব্যাপার, ক্যাম্পাস প্লেসমেন্টের সময়ে সাগর এবং বিনোদ উভয়কেই একটি আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। বার্ষিক ৩ লক্ষ টাকার বেশি চাকরির প্যাকেজ থাকায় এটি ছিল একটি লোভনীয় অফার। তবে, তাঁরা Wow! Momo-রর সাফল্যের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করে তাঁদের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথ বেছে নেন।সমান সমান অংশীদারিত্বে নিজেদের ব্যবসা গঠন করে, পরে ইন্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল নেটওয়ার্ককে (IAN) ১০% শেয়ার অফার করে এবং তাঁদের কর্মীদের কোম্পানির সাফল্যের অংশ হিসেবে নিশ্চিত করার জন্য একটি কর্মচারী স্টক মালিকানা পরিকল্পনা (ESOP) তৈরি করেন তাঁরা।
advertisement
একটি সাধারণ মোমো স্টল হিসেবে শুরু হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি শীঘ্রই একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। আর্থিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে এই জুটি দ্রুত তাঁদের ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে Wow! Momo-রর ১৯টি শহরে ৪২৫টি আউটলেট ছিল, যা তিনটি ব্র্যান্ডের অধীনে পরিচালিত হত: ওয়াও! মোমো, ওয়াও! চায়না এবং ওয়াও! চিকেন। কাঁচামালের জন্য স্থানীয় মুদি দোকান থেকে ঋণের উপর নির্ভর করা থেকে শুরু করে মাসিক ৪০-৪৫ কোটি টাকা আয় করা পর্যন্ত তাঁদের এই যাত্রা নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। তাঁদের স্লোগান "মোমো অন দ্য মুভ" তাঁদের ক্রমবর্ধমান উদ্ভাবন এবং ব্যবসায়িক সম্প্রসারণকেই তুলে ধরে।
advertisement
বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধি: এই সাফল্য বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করে। ২০১৭ সালে লাইটহাউস ফান্ডস এবং আইএএন কোম্পানিতে ৪৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। পরের বছর ফ্যাবইন্ডিয়ার এমডি, উইলিয়াম বিসেল, ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন, যার ফলে ব্র্যান্ডের ওয়ার্থ ৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০১৯ সালের মধ্যে টাইগার গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট ১৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, যার ফলে কোম্পানির নেট ওয়ার্থ ৮৬০ কোটি টাকায় পৌঁছে যায়। এই বিনিয়োগগুলি সাগর এবং বিনোদকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলিতে সম্প্রসারণ করতে এবং ভারত জুড়ে ব্র্যান্ডের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে সক্ষম করে।
advertisement
চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠা: মহামারীর মূলমন্ত্র: কোভিড-১৯ মহামারী খাদ্য শিল্পের জন্য উল্লেখযোগ্য বাধা তৈরি করেছিল, কিন্তু Wow! Momo-র সেই পরিস্থিতির মধ্যেও মানিয়ে নিতে পেরেছিল। তারা কাফে কফি ডে-এর সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বে চলে যায়, আউটলেট স্পেস, খরচ এবং রাজস্ব ভাগ করে নেয়। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতি তাদের বিশ্বস্ত গ্রাহকদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেও সাহায্য করেছে।
advertisement
আগামী দিনের পরিকল্পনা: ৪৭৭টিরও বেশি স্টোর এবং জনসাধারণের জন্য আরও স্টোর খোলার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে Wow! Momo-র বিশ্বব্যাপী একটি ফুড পাওয়ার হাউস হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে চলেছে। তাদের লক্ষ্য? কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং ফাস্ট-ফুড শিল্পে বিপ্লব আনার পাশাপাশি ভারতীয় স্বাদকে আন্তর্জাতিক ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। একটি ছোট মোমো স্টল থেকে কোটি কোটি টাকার রন্ধনসাম্রাজ্যে সাগর এবং বিনোদের যাত্রা প্রমাণ করে যে আবেগ, অধ্যবসায় এবং উদ্ভাবনী মানসিকতা নিছক সোজাসাপটা সাদামাটা পরিকল্পনাকেই অকল্পনীয় সাফল্যে পরিণত করতে পারে।