কিন্তু কেন মা দুর্গার এই বৈচিত্র্য । অনেক অজানা গল্পই আছে ইতিহাসের পাতার গভীরে । কালের নিয়মে সেই সমস্ত প্রাচীন ইতিহাস, লোককথা, সংস্কৃতিতে মরচে পড়ে গিয়েছে । অনেকেই আমরা জানি না, কেন এই দুই ধরনের সিংহের ব্যবহার । এই ব্যবহারের মধ্যেও রয়েছে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস ।
আজ সেই গল্পই খানিক নাড়াচাড়া করা যাক । বাঙালি হিন্দু প্রধানত দু’টি মতে বিভক্ত । একটি শাক্ত, যাঁরা শক্তির উপাসনা করেন । অন্যটি বৈষ্ণব, যাঁরা রাধাকৃষের ভাবধারায় চালিত, অহিংস পুজোআচ্চায় বিশ্বাসী তাঁরা । মা দুর্গা প্রকৃত পক্ষে শাক্ত । আগেকার দিনে বারোয়ারি বা ক্লাব পুজোর চল যখন ছিল না, তখন পুজো ছিল পরিবারকেন্দ্রিক । বড় বড় রাজবাড়ি, জমিদার বাড়ি, নায়েব বাড়ি বা ব্যবসায়ী বাড়িতে পুজো হত । কারণ দুর্গা পুজো যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ পুজো । সকলের তা করার সামর্থ্য ছিল না ।
advertisement
প্রতিটি বনেদি বাড়িই কোনও না কোনও মতে দিক্ষিত ছিল । হয় শাক্ত, নয় বৈষ্ণব । এই দুই বাড়ির সিংহের মধ্যে প্রচ্ছন্ন এই তফাৎটি লক্ষ্য করা যায় । শাক্ত বাড়িতে মায়ের বাহন হত সিংহ আর বৈষ্ণব বাড়িতে নরসিংহ । এই নরসিংহের গায়ের রং সাদা । মুখটা ঘোড়ার মতো । সামনের পা দু’খানি আবার মানুষের মতো ।
আবার অনেক বাড়িতেই শাক্ত-বৈষ্ণবের মিলমিশ ঘটেছে । কোনও একটা প্রজন্ম হয়তো শাক্ত থেকে কৃষ্ণ মন্ত্র নিয়ে গোঁসাই হয়েছে । সেই সমস্ত বাড়িতে দেখা যায় এই দুয়েরই মেলবন্ধন । খুব ভাল করে মা দুর্গার চালচিত্র লক্ষ্য করলে এই বৈশিষ্ট্য গুলি ধরা পড়ে । বৈষ্ণবীয় বংশের দুর্গার দেবীচালে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা যেমন ফুটে ওঠে, তেমনই শাক্ত বংশের চালচিত্রে থাকে দেবী দির্গার অসুরনিধন বা দশমহাবিদ্যা । অনেক গৌঁসাই বাড়িতে আবার মহিষাসূর মর্দিনীর গল্প আঁকা হলেও তাতে সিংহ হয় নরসিংহ । কোথাও আবার দুই মতেরই মিলন দেখা যায় চালচিত্রে । সেখানে একইসঙ্গে রাধাকৃষ্ণ আর দেবীর শক্তি রূপ বিরাজমান ।