সেই সময় বিমানের ভিতরের একটি ভিডিও-ও ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে যে, বিমানের ভিতর ভয়ে-আতঙ্কে চিৎকার ও কান্নাকাটি করছেন যাত্রীরা। গোটা বিমান জুড়ে যেন চরম বিশৃঙ্খলার পরিবেশ। বিমান সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দিল্লি থেকে শ্রীনগরগামী ইন্ডিগোর ফ্লাইট 6E 2142 হঠাৎ শিলাবৃষ্টির মুখে পড়েছিল। উড়ান এবং কেবিন ক্রু-রা প্রোটোকল মেনেই বিমানটিকে নিরাপদে শ্রীনগরে অবতরণ করানো গিয়েছে। যদিও বিমান সংস্থার তরফে ক্ষয়ক্ষতির কোনও বিবরণ দেওয়া হয়নি। তবে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গিয়েছে যে, বিমানের সামনের অংশ অর্থাৎ নাকের অংশ ভেঙে গিয়েছে।
advertisement
আর এই সমস্ত খবর থেকে নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে যে, যখন একটি শক্তিশালী ঝড় আসে, তখন সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ! শক্তিশালী ঝড় এলে কী করণীয়?
বাড়িতে অথবা নিরাপদ স্থানে থাকতে হবে:
জানলা-দরজা বন্ধ রাখতে হবে। যদি মাথার উপরে থাকা পাকাপোক্ত না হয়, তাহলে পাকা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।
বাইরে থাকলে কী করণীয়:
বাইরে থাকাকালীন ঝড়ের মুখে পড়লে অবিলম্বে একটি পাকা জায়গা বা শক্তপোক্ত যানবাহনের মধ্যে আশ্রয় নিতে হবে। গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি অথবা বড় বিল্ডিং থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ ঝড়ের সময় এগুলি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি কাছে-পিঠে কোনও নিরাপদ স্থান না থাকে, তাহলে মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে এবং হাত দিয়ে মাথাকে ঢেকে রাখতে হবে।
বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের দিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক:
বাড়ির বিদ্যুতের মেন স্যুইচটি বন্ধ করে রাখতে হবে, যাতে শর্ট সার্কিট হলেও যে কোনও রকম দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। গ্যাস লিক হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে এবং গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটর বন্ধ করে রাখতে হবে।
জরুরি সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখা আবশ্যক:
হাতের কাছে একটি টর্চ, জল, ওষুধ এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রেখে দিতে হবে। নিজের মোবাইল ফোন আগে থেকে চার্জ দিয়ে রাখতে হবে এবং রেডিও বা অন্য কোনও মাধ্যম ব্যবহার করে আপডেট শুনতে থাকতে হবে।
ঝড়ের পরে কী করণীয়?
ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তার বা ভাঙাচোরা বাড়ি থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। শুধুমাত্র প্রয়োজন হলেই বাইরে বেরোতে হবে এবং প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি বা শিলাবৃষ্টি হলে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সতর্ক ও শান্ত থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কমে।
তীব্র ধুলোঝড় চলাকালীন খোলা আকাশের নীচে গাড়ি চালালে কী করণীয়?
১. অবিলম্বে গাড়ি থামিয়ে একটি নিরাপদ স্থান খুঁজে নিতে হবে। কিংবা গাড়ির গতি কমিয়ে রাস্তার পাশে নিরাপদ স্থানে দাঁড়াতে হবে। যদি হাইওয়ে বা এক্সপ্রেসওয়েতে থাকাকালীন ঝড় ওঠে, তাহলে জরুরি পার্কিং এলাকায় দাঁড়াতে হবে। গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, বড় বিল্ডিং অথবা বড় হোর্ডিং থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
২. গাড়ির মধ্যে থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ধুলো যাতে ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য গাড়ির জানলা বন্ধ রাখতে হবে। ইঞ্জিন এবং হেডলাইট বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু এমার্জেন্সি লাইট জ্বালিয়ে রাখা আবশ্যক, যাতে অন্য চালকরা গাড়িটি দেখতে পান। সিট বেল্ট পরে থাকা আবশ্যক। কারণ প্রবল বাতাস গাড়িটিকে নাড়িয়ে দিতে পারে।
৩. যদি ঝড় খুব তীব্র হয় এবং গাড়িটি উড়ে যাওয়ার অথবা উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে গাড়ি ছেড়ে মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে। হাত বা শক্ত কিছু দিয়ে মাথাকে ঢেকে রাখতে হবে।
ঝড়ের পরে পরিবেশ শান্ত হলে কী করণীয়?
ঝড় পুরোপুরি থামলে গাড়ি নিয়ে সাবধানে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে। রাস্তার ধারে পড়ে থাকা গাছ, বিদ্যুতের তার বা ধ্বংসাবশেষ থেকে সাবধান হতে হবে। গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা রাস্তা বন্ধ থাকলে হেল্পলাইনে কল করতে হবে। রেডিও বা আবহাওয়ার আপডেট শুনতে থাকা আবশ্যক। আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকা আবশ্যক এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। যদি ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি বা শিলাবৃষ্টি হয়, তাহলে গাড়িটি কোনও ব্রিজ বা ফ্লাইওভারের নীচে পার্ক করতে হবে। তবে জলমগ্ন হয়ে যায়, এমন এলাকা এড়িয়ে চলাই ভাল।
১৯৯৯ সালের ওড়িশা সুপার সাইক্লোন:
১৯৯৯ সালের ২৯ অক্টোবর এসেছিল ওড়িশার সুপার সাইক্লোন। ভুবনেশ্বর, পুরী, কেন্দ্রাপড়া এবং জগৎসিংহপুর এই ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৬০ কিলোমিটার। এটিকে এখনও পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এতে অনেক ক্ষয়-ক্ষতিও হয়েছে। দশ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। প্রায় ২০ লক্ষ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছিল এবং লক্ষ লক্ষ গাছ উপড়ে গিয়েছিল।
২০২০ সালের আমফান:
পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল আমফান। ওই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৪০ কিলোমিটার। এই ঘটনায় ভারত ও বাংলাদেশে মোট ১২৮ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই ঝড়ে ১৩,০০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছিল। এর ফলে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১৯৭৭ সালের অন্ধ্রপ্রদেশের ঘূর্ণিঝড়:
এই ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৭৭ সালের ১৯ নভেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশে আঘাত হেনেছিল। এটি বিশাখাপত্তনম এবং কৃষ্ণা-গোদাবরী ব-দ্বীপকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৭০ কিলোমিটার। অনুমান করা হয় যে, ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন এই ঝড়ের কবলে পড়ে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় গ্রাম এবং মৎস্যজীবীরা। এই ঘূর্ণিঝড়ের পরেই ভারতে প্রথম বারের মতো একটি আধুনিক ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল।
২০১৮ সালের কেরলের বন্যা এবং ঝড়:
২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে বর্ষার ভারি বৃষ্টিপাত এবং তীব্র বাতাস কেরলে রীতিমতো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এর ফলে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছিল এবং ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে ঘরহারা হতে হয়েছিল। আর এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় কেরলের অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা দিয়েছিল।
২০২১ সালের ঘূর্ণিঝড় তৌকতে:
২০২১ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় তৌকতে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, দমন ও দিউতে আঘাত হেনেছিল। এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার। তৌকতে ঝড়ে ১০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এমনকী এর ফলে মুম্বই এবং সুরাতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।
