চার ধাম যাত্রার গুরুত্ব:
আমরা আগেই বলেছি যে, বদ্রীনাথ, রামেশ্বরম, দ্বারকাধীশ এবং জগন্নাথ পুরী চার ধাম যাত্রা নামে পরিচিত। আসলে আদি শঙ্করাচার্য এই মন্দিরগুলিকে অষ্টম শতকে একত্রে সংযুক্ত করেছিলেন। তিনিই এই চারটি ধাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এই ধামগুলিকে হিন্দু ধর্মের চারটি প্রধান মন্দির হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই চারটি ধামের মধ্যে বদ্রীনাথ, দ্বারকাধীশ এবং পুরী হল ভগবান বিষ্ণুর মন্দির। অন্য দিকে রামেশ্বরম ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি মন্দির। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, চার ধাম যাত্রা করলে পুণ্যার্থীদের মোক্ষ লাভ হয় এবং তাঁদের সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়।
advertisement
বদ্রীনাথ ধাম:
উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ের কোলে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধাম ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে নিবেদিত এবং এখানে ভগবান বিষ্ণু বদ্রীনাথ রূপে অধিষ্ঠান করছেন। চার ধাম যাত্রার মধ্যে প্রথম ধামটি হল বদ্রীনাথ ধাম। আর এখান থেকে পুণ্যার্থীদের বৈজয়ন্তী মালা বা তুলসী সংগ্রহ করে নিয়ে আসা উচিত। এই স্থানটিকে সত্য যুগের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এই ধামটি বৈকুণ্ঠ নামেও পরিচিত। নর ও নারায়ণ পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে অলকানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই বদ্রীনাথ ধাম।
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরেই থাকেন, ১২ ঘণ্টা পড়াশোনা! CBSE টপার ভবিষ্যতে কী হতে চান জানেন?
রামেশ্বর ধাম:
রামেশ্বর ধামকে বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। আর রামায়ণ যুগ থেকেই এর উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই শিবলিঙ্গটি ভগবান রাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং লঙ্কা জয় করার জন্য সেই শিবলিঙ্গেই পূজা নিবেদন করেছিলেন তিনি। তাই রামেশ্বর ধাম ভগবান রাম এবং ভগবান শিব উভয়ের সঙ্গেই যুক্ত, এমনটাই মনে করেন ভক্তরা। বিশ্বাস করা হয় যে, এখানে শিবলিঙ্গে কেবল গঙ্গা জল অর্পণ করলেই ব্রহ্মহত্যার মতো পাপের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রামেশ্বরকে চার ধাম যাত্রার দ্বিতীয় ধাম হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই পুণ্যার্থীদের এই ধাম থেকে পবিত্র জল সংগ্রহ করে নিয়ে আসা উচিত। আর এই স্থানটিকে ত্রেতা যুগের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
দ্বারকাধীশ ধাম:
প্রধান চারটি ধামের মধ্যে তৃতীয় ধাম হল দ্বারকাধীশ ধাম। আর এই দ্বারকাধীশ ধাম আবার জগৎ মন্দির নামেও পরিচিত। ভগবান কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নিবেদিত এই মন্দিরটি গুজরাতে অবস্থিত এবং বৈষ্ণব ভক্তদের কাছে এই ধামের এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, দ্বাপর যুগে এটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবাসস্থল ছিল। তাই এটি হরি গৃহ নামেও পরিচিত। চার ধাম ছাড়াও এই দ্বারকাধীশ ধামকে সপ্তপুরীর মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয়। তাই এখান থেকে পুণ্যার্থীদের গোপী চন্দন কাঠ এবং ময়ূরের পালক সংগ্রহ করে আনা উচিত। আর এই স্থানটি দ্বাপর যুগের প্রতীক বলে গণ্য করা হয়।
জগন্নাথ পুরী ধাম:
ওড়িশার পুরীতে অবস্থিত জগন্নাথ পুরী ধামকে চতুর্থ ধাম হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ভগবান বিষ্ণু যখন তাঁর পবিত্র ধাম গুলি দর্শনে আসেন, তখন তিনি বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন, দ্বারকা ধামে পোশাক পরিধান করেন, পুরী ধামে খাবার গ্রহণ করেন এবং রামেশ্বর ধামে বিশ্রাম নিয়ে থাকেন। দ্বাপর যুগের পরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভাই এবং বোন ভগবান বলরাম এবং দেবী সুভদ্রার সঙ্গে জগন্নাথ পুরী ধামে বিশ্রামে থাকেন। জগন্নাথ পুরী ধামে লুকিয়ে রয়েছে নানা রকম রহস্য এবং অলৌকিকতা। পুণ্যার্থী যদি এই ধাম থেকে নিজেদের বাড়ির জন্য নারকেলের কাঠি বা দণ্ড নিয়ে আসেন, তাহলে সেটিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।