ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার গভীর রাতে৷ বেআইনি অস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগ তুলে গতকাল রাত একটার পরে ব্যবসায়ী আসরাউল শেখের বাড়িতে হানা দেয় কালিয়াচক থানার পুলিশকর্মীদের একটি দল৷ ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তল্লাশির নামে বাড়ি থেকে নগদ প্রায় ২৪-২৫ লক্ষ টাকা এবং প্রায় ৩৪-৩৫ ভরি সোনা লুট করেন কয়েকজন পুলিশকর্মী। সকালে ঘটনা চাউর হতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই এক এএসআই সহ তিন পুলিশকর্মীকে ক্লোজ করার নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(গ্রামীণ)-কে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
advertisement
আরও পড়ুন: মাওবাদীদের অর্থ জোগানের অভিযোগ, সল্টলেক থেকে এনআইএ-র জালে ঝাড়খণ্ডের ব্যবসায়ী
আসরাউল শেখ নামের ওই ব্যক্তির দাবি, ভিন রাজ্যে শ্রমিক সরবরাহ এবং জমির ব্যবসা করেন তিনি। গভীর রাতে কালিয়াচক থানার চার-পাঁচজনের একটি দল জোর করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ব্যবসায়ীকে মারধর এমন কি বেঁধে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। এর পর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ও প্রচুর সোনার গয়না নিয়ে পুলিশ দলটি চম্পট দেয় বলে দাবি করেন ওই ব্যবসায়ী।
মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) আনিস সরকার জানিয়েছেন, এ দিন দুপুর পর্ষন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এ দিন কালিয়াচক থানায় ডেকে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ)। ওই বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজও খতিয়ে দেখা হবে।
তবে, তল্লাশির নামে কর্তব্যে গাফিলতির "গুরুতর" অভিযোগ রয়েছে ওই তিন পুলিশকর্মী বিরুদ্ধে। প্রাথমিক তদন্তে চূড়ান্ত গাফিলতি মেলায় এ এস আই পীযুষ মণ্ডল, কনস্টেবল আশীষ দে এবং রাজকুমার ঘোষকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশ কর্তার দাবি, কালিয়াচক থানার আইসি সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেই গভীর রাতে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে তল্লাশি চালানোর জন্য যান ওই পুলিশকর্মীরা।
অস্ত্র না পেলেও নগদ টাকা এবং বেশ কিছু গয়না ওই বাড়ি থেকে নিয়ে বেরোনোর পরেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কিছু জানাননি তাঁরা। বাড়ি থেকে টাকা ও গয়না নিয়ে এলেও কোনওরকম 'সিজার লিস্ট'-ও করা হয়নি। ঘটনা নিয়ে হইচই শুরু হওয়াতে সকালে কালিয়াচক থানার আইসি-কে বিষয়টি জানান অভিযুক্তরা।
আরও পড়ুন: সিলিং কেটে দোকানে ঢুকল চোর, হাওড়ায় মোবাইল দোকানে দুঃসাহসিক চুরি, দেখুন ভিডিও
এ ভাবে গোপনে অভিযান চালানো নিয়ে পুলিশের তদন্তকারীদের প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি অভিযুক্ত পুলিশকর্মীরা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ওই বাড়ি থেকে টাকা ও গয়না নিয়ে বের হয় পুলিশ। কিন্তু, বাইরে এসে বাড়ির মালিকই টাকা ও গয়নার ব্যাগ পুলিশের কাছ থেকে ফের ছিনিয়ে নেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন অভিযুক্ত পুলিশ এএসআই। ফলে টাকা ও গয়নার কোনও হদিশ মেলেনি।
সাসপেন্ড করার পাশাপাশি ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত চলবে। পুলিশ জানিয়েছে, দুপুর পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনওরকম লিখিত অভিযোগ মেলেনি। তবে, তদন্তকারীরা ওই বাড়ির মালিক ব্যবসায়ী আসরাউল শেখের সঙ্গেও কথা বলবেন।
