চারশো বছরের পুরানো ভূপালপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। করোনা আবহের কারনে আগেই রাজা ভূপাল চন্দ্র রায় চৌধুরীর বংশধরেরা ঘট পুজো করবেন বলে ঘোষনা করেছিলেন। কারন বাড়িতে রয়েছে ৮২ বছর বৃদ্ধা। আছে এই বংশধরদের ছোট ছোট বাচ্চা। করোনা সংক্রামন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবছরের মত এবারেও জাকজমকভাবে পুজো করলে করোনা রোগে তাঁরা আক্রান্ত হতে পারেন। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার ব্লকের দুর্গাপুরে ভূপালপুর জমিদার বাড়ি এলাকার মানুষদের কাছে তথাকথিত রাজবাড়ির পুজো নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে একটা বাড়তি উন্মাদনা থাকে। পরিস্থিতির কথা বিচার করে এবারে সেই উন্মাদনায় এবারে রাস টানছেন চৌধুরী বাড়ির বংশধররা।
advertisement
কথিত আছে, মুঘল সম্রাট শেরশাহের আমল থেকেই এই বংশের দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়েছিল। পরবর্তীতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় চৌধুরী, ভূপাল চন্দ্র রায় চৌধুরী রাজ পরিবারের বংশধরের হাত ধরে এখানে দেবী পূজিতা হন। ইতিহাসের পথ বেয়ে আজও দুর্গাপুর রাজবাড়িতে পুজো করে আসছেন তাঁদের বংশধরেরা। দেবী দুর্গা কয়েকশো বছরের প্রাচীনত্বের গন্ধ মেখে নিয়মনিষ্ঠার সাথে পুজো পেয়ে থাকেন এই রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দুর্গা দালানে। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছুটা পুজোর পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটেছে রাজবাড়ির পুজোয়। আগে মহালয়ার দিন থেকেই দুর্গার আরাধনায় মেতে উঠতেন রাজ পরিবারের সদস্যরা এবং এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।
জোরা মোষ ও পাঁঠাবলির মাধ্যমে আগে দেবীর বোধন হত মহালয়াতেই। এখন মহাষষ্ঠীতেই দেবীর বোধনের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলি প্রথা। তবে পুজোর নিয়মনিষ্টা রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। এখানে অসুরের গায়ের রঙ হয় ঘন সবুজ আর দেবী দুর্গার মাথার উপরে ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের অধিষ্ঠান থাকে। ইটাহারের চূড়ামন এলাকাতেই দেবী দুর্গার আরাধনা হত। সেখানে মহানন্দা নদীর করাল গ্রাসে রাজবাড়ি ও রাজ্যপাট চলে যায় নদীগর্ভে। তারপর সেখান থেকে চলে এসে দূর্গাপুরে নির্মিত হয় রাজপ্রাসাদ ও দেবী দুর্গার মন্দির। মহালয়ার দিন থেকে রাজবাড়ির পূজোকে কেন্দ্র করে যাত্রাপালা, থিয়েটার, সার্কাসের আসর বসত। তবে রাজবাড়ির দুর্গাপূজা নিয়ে এখনও এলাকার মানুষের মধ্যে একটা আলাদা উন্মাদনা থাকে।
কিন্তু এবছর করোনার আবহে সেটুকুও বন্ধ করতে হয়েছে। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে হাজার মানুষের সমাগম আটকাতে এবার প্রতিমা পুজো বন্ধ করে শুধুমাত্র ঘটপুজো করছেন রাজ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের বংশধরেরা। দীর্ঘদিনের ইতিহাসের পরিবর্তন হওয়ায় মন খারাপ তাদের। কলকাতা, রায়গঞ্জ-সহ বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্ত সদস্য আছেন তারা বারেবারে ফোন করছেন। কারন তারা কোনদিনই এভাবে পুজা হতে দেখেননি।
Uttam Paul