নবমীর দিন থেকে দার্জিলিং, পরে কালিম্পং ও কার্শিয়ং জুড়ে একের পর এক মিছিল। গুরুং বিরোধী স্লোগান। মনে করাচ্ছে ২০১৩ ও ২০১৭ সালের স্মৃতিকে। বিমল গুরুংকে পাহাড়ে আসতে দিতে চায় না গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার গুরুং বিরোধী শিবির। এমতাবস্থায় দলের প্রাক্তন সুপ্রিমোকে আটকাতে মুখ্যমন্ত্রীর দরবার পর্যন্ত আসছেন বিনয় তামাং, অনিত থাপারা।
আজ, মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই গুরুংয়ের আত্মপ্রকাশ পরবর্তী পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বৈঠক শুরুর আগে বিনয় জানিয়েছেন, ‘‘বিমল গুরুং একটা পলিটিক্যাল ক্রিমিনাল। ১৬৭টি কেস চলছে। সেই কেস আগে মেটাক। তারপর বাকি কথা হবে। নিজের ছাড়া কিছু বোঝে না। ২০১০ সালে বলেছিল গোর্খাল্যান্ড না হলে গুলি করব নিজেকে। আজ অবধি করেনি তো? এখন বলছে বিজেপি ২০১৭ সালের পরে খারাপ। বিহারে ভোট চলছে, লালু প্রসাদ যাদব তো জেলে আছেন।আইনকে সম্মান দিয়ে। তাহলে উনি বাইরে আছেন কেন? উনি কি লালু প্রসাদের থেকে বড়? ২০১৯ আর ২০২১ রাজনৈতিক অবস্থান দুটোই আলাদা। পাহাড়ের তিনটে আসন জিতবই। সাথে মাদারিহাট আর কালচিনি জিতব। বাকি আসনে ডুয়ার্সে আলাদা কমিউনিটি আছে। তারা ভোট দেবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের ভালোবাসেন। তাই আমাকে আর অনীতকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমরাও এসেছি। আমি শুধু বলব পুরনো বন্ধুদের ভরসা রাখুন। আমি রাজনৈতিক ভাবে, অনীত প্রশাসনিক ভাবে এসেছে আজ আমাদের অবস্থান জানাতে। এটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্যে ৷ বিমল-রোশন নিজেদের সেফটির জন্য অবস্থান বদল করছে। বিমল বলছে ও টিএমসি সমর্থন করবে। টিএমসি তো কিছু বলেনি এখনও। পাহাড়ে গোলমাল চাই না। রোজই পাহাড়ে হয়ে চলা মিছিল-মিটিং থেকে উঠেছে এই আর্জি।’’
advertisement
গত শনিবার কার্শিয়াং বাজার ও মিরিক বাজারে প্রকাশ্য সমাবেশ করে মোর্চার বিনয় তামাং শিবির। তাঁদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট, ‘বিমল গুরুংকে যেন পাহাড়ে ঢুকতে না দেওয়া হয়। আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’ তারপরেই বিনয়-অনিতের নবান্নে আসার খবর জানা যায়। সরকারিভাবে অবশ্য রবিবার স্বীকার করা হয় আলোচনার ব্যপারে। তবে এটা স্পষ্ট, গুরুংয়ের জন্য পাহাড়ের রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। গুরুংয়ের এক সময়ের খাসতালুক কার্শিয়াং ট্যুরিস্ট পয়েন্ট রেল স্টেশন ও মিরিক বাজারের কাছে বিনয় তামাং শিবিরের এই প্রকাশ্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে দু’জায়গাতেই মিছিল করেন মোর্চা সমর্থকরা। মিছিল থেকে ওঠে গুরুং বিরোধী স্লোগান। প্রকাশ্য সভায় প্রাক্তন মোর্চা সুপ্রিমোর বিরোধিতা করে পোস্টারও লাগানো হয়েছে। দু’টি সভাতেই বক্তব্য রাখেন বিনয় ঘনিষ্ঠ মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র কেশবরাজ পোখরেল। পাহাড়ের এক সময়ের বেতাজ বাদশাকে রেয়াৎ করতে নারাজ বিনয়-অনীত শিবির। কোনও রাখঢাক না করে বলেছেন, বিমল গুরুংকে কেউ পাহাড় ছাড়া করেনি। তিনি নিজেই পাহাড় থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। ওঁর জন্য ২০১৭ সালে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের জন্য আমাদের ১৩ জন সমর্থককে প্রাণ দিতে হয়েছে। আর নয়। গুরুংয়ের জন্য পাহাড়ের শান্তি বিঘ্নিত হতে দেওয়া যায় না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ ওঁকে যেন কোনওভাবেই পাহাড়ে ঢুকতে না দেওয়া হয়। গুরুং যেন কোনওভাবেই পাহাড়ে না আসে।পাহাড়ের শান্তিতে তাঁরা আঁচ আসতে দেবেন না। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মোর্চা নেতাদের গলায় বারবার উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধের বিষয়টি। পাশাপাশি বিনয় তামাংয়ের উপর আস্থার প্রসঙ্গও।
কেশব পোখরেল জানিয়েছেন, পাহাড়ের মানুষের সঙ্গে এতদিন বিনয় তামাং, অনীত থাপারা ছিলেন। তারা দু'জনেই পাহাড়কে শান্ত রেখেছেন। অন্য কেউ তা করতে পারবে না। একই সুর শোনা যাচ্ছে বিনয় তামাং ঘনিষ্ঠ পুরাণ থামির গলাতেও। তাঁর কথাতেও গুরুংয়ের জন্য পাহাড়ের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। বিনয় শিবিরের পরিষ্কার বক্তব্য, ‘যাঁরা আজ গুরুংকে পাহাড়ে স্বাগত জানাতে চাইছে, তাঁরা সবাই ধোঁকাবাজ। পাহাড়ে এতদিন শান্তি ছিল ও থাকবে। আমরা কোনওভাবেই পাহাড়ের শান্তি নষ্ট হতে দেব না।’
দুর্গাপুজোর মুখে উৎসবের ভরা মরশুমে কলকাতায় এসে পাহাড়ের রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন বিমল গুরুং এবং রোশন গিরি। নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দূরে সরে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চান বলেছেন। পাশাপাশি চেয়েছেন গোর্খাল্যান্ডের ব্যাপারে রাজনৈতিক সমাধান। পাহাড়ের রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন যারা তারা বলছেন বিমল বনাম বিনয়-অনিত শিবির নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে চাইছে আর এখানেই রয়েছে অশান্তির বীজ। বর্তমানে পাহাড়ে ক্ষমতাসীন বিনয় তামাং গোষ্ঠীর সঙ্গে বিমল-রোশনের বনিবনা হবে না, এটা প্রত্যাশিত। সুতরাং পাহাড়ে অশান্তি এড়িয়ে কিভাবে এগোনো যাবে সেদিকেই চেয়ে রাজনৈতিক মহল। বিশেষ করে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে পাহাড় নিয়ে ভুল চাল চালতে রাজি নয় কোনও পক্ষই।
আবীর ঘোষাল