মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে একাধিকবার পাহাড়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও পাহাড়ে লোকসভা নির্বাচন ও বিধানসভা উপনির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। একমাত্র মিরিক পুরসভা তৃণমুলের দখলে থাকলেও পাহাড়ের কোলে ঘাসফুল ফোটেনি। হাজারো চেষ্টা করেও আশাহত হয়েছে রাজ্যের শাসক দল। অন্যদিকে ২০১৭ সাল থেকে নানা সুবিধা পেলেও বিনয় শিবিরও আশাব্যঞ্জক সাংগঠনিক সাফল্য দিতে পারেনি। কিন্তু উত্তরবঙ্গে কালিয়াগনজ বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়, চলতি মাসের তিন তারিখ শিলিগুড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল ও সিএএ-ক্যাব ইস্যু নিয়ে পাহাড়ের মানুষের প্রতিবাদকে সামনে রেখে ফের সংগঠন শক্তিশালী করতে আসরে নেমেছে বিনয়-অনীত শিবির।
advertisement
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ে মিছিল করবেন আগামীকাল ২২ জানুয়ারি। সেই মিছিলেই নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে মরিয়া বিনয় শিবির।
প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে মিছিল হবে দার্জিলিং রাজভবন থেকে মোটর স্ট্যান্ড পর্যন্ত। প্রসঙ্গত, এই চকবাজার থেকেই পাহাড়ের নানা রাজনৈতিক আন্দোলনের ঘোষণা করতেন বিমল গুরুং। পাহাড়ে বিমল-রোশন না থাকলেও পাহাড়ে তাদের প্রভাব অস্বীকার করছেন না কেউই। বিশেষ করে তাদের প্রভাবেই বিজেপি পাহাড়ের লোকসভা আসন জিতেছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু অসমে এন আর সি তালিকা প্রকাশের পরে যে ভাবে কয়েক লক্ষ গোরখা মানুষের নাম বাদ গেছে তাতে পাহাড়ের একটা বড় অংশ ভীষণ রকম ক্ষুব্ধ। আর সেটাকে কাজে লাগিয়েই এবার পাহাড়ে ফের নিজেদের সংগঠনের দক্ষতা প্রমাণে মরিয়া বিমল-অনীতরা। একেবারে সুকনা থেকে মোটর স্ট্যান্ড অবধি পাহাড়ের বিভিন্ন কোণে এনআরসি ও সিএএ বিরোধিতায় পোস্টার লাগানো হয়েছে। পাহাড়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে দেখা যাচ্ছে তৃণমুলের পতাকা।
মিছিল নিয়ে ইতিমধ্যেই বৈঠক সেরে ফেলেছেন বিনয় শিবিরের নেতারা। বৈঠক করেছেন তৃণমুলের নেতারাও। কালিম্পঙ, মিরিক, কারশিয়ং, দার্জিলিং সমস্ত এলাকার মানুষরা যোগ দেবেন। মিছিলের প্রথম সারিতে থাকবে পাহাড়ের বিশিষ্টজনেরা। থাকবেন পাহাড়ে তৈরি হওয়া সমস্ত জনজাতি বোর্ডের সদস্যরা। এছাড়া তাদের যে বিশেষ পোষাক আছে তা পরেই তাদের মিছিলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তবে মিছিলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পাহাড়ের যুবদের। যুব মোর্চার সভাপতি অমৃত ইয়ানজন তা নিয়ে বৈঠক করেছেন। চেষ্টা করা হচ্ছে আগামীকাল পাহাড়ের সমস্ত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিলে সামিল করার। মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ির সভা থেকে সরব হন ছাত্রদের ওপর জোর করা হচ্ছে। তাদের আন্দোলনে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের তরফে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। সোমবার ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান করতে না পারলেও ভবিষ্যতে তিনি সেখানে সভা করতে চান বলে জানিয়েছেন। সেই কারণেই পাহাড়ের মানুষের মন জয় করতে যুব শক্তিকেই কাছে টানার চেষ্টা চলছে। পাহাড়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মিছিল নিয়ে আশাবাদী তৃণমুল শিবিরও। তৃণমুলের রাজ্য সভার সাংসদ শান্তা ছেত্রী বলেন, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দেওয়াটা যে ভুল হয়েছিল তা বুঝতে পারছেন পাহাড়ের মানুষ। সেই কারণেই পাহাড়ের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলে যোগ দিয়ে প্রতিবাদ জানাবেন। আগামীকালের মিছিল তাই পাহাড়ে নতুন আন্দোলনের জন্ম দেবে। মিছিলের প্রস্তুতি সেরে ফেলা হয়েছে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায়। পাহাড়ের ১৬টি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করছেন বিনয়-অনীত। মিছিলে সিএএ ও ক্যাব বিরোধী পোস্টার থাকছে । বিনয় তামাং বলেন, কেন্দ্রীয় নীতি পাহাড়ের মানুষকে বিপদে ফেলেছে। তাই আগামীকাল মিছিলে উৎসাহ নিয়েই যোগ দেবেন পাহাড়ের মানুষ।
শিলিগুড়ির মিছিলে যে ভাবে বিশাল সংখ্যক মানুষ যোগ দিয়েছিলেন তাতে খুশি তৃণমুল শিবির। উত্তরবঙ্গে নিজেদের শক্তি যাচাইয়ে তাই পাহাড়ের মিছিল নিয়ে পরিকল্পনায় কোনও ফাঁক রাখতে চায় না তারা। আর এই মিছিল থেকে নিজেদের অস্তিত্ব পাহাড়ে বোঝাতে চায় বিনয়-অনীত শিবিরও। দুই মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দার্জিলিংয়ে প্রথম মিছিল থেকে রাজনৈতিক জমি শক্ত করতে সচেষ্ট তৃণমুল কংগ্রেস।
ABIR GHOSHAL