এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যের এবং গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনও উপযুক্ত অনুসন্ধানের জন্য অপেক্ষা না করেই – তা-ও আবার যখন উত্তরবঙ্গের মানুষ ভয়াবহ বন্যা ও ধসের সঙ্গে যুঝছেন। যখন সমগ্র স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে ব্যস্ত হয়ে আছে, তখন বিজেপি নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক গাড়ির কনভয় নিয়ে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে এবং স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে কোনও খবর না দিয়ে। রাজ্য প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ বা তৃণমূল কংগ্রেসকে কীভাবে এই ঘটনার জন্য দায়ী করা যাবে?
advertisement
প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওপর দোষারোপ করেছেন কিছুমাত্র প্রমাণ ছাড়া, আইনানুগ কোনও তদন্ত ছাড়া এবং কোনও প্রশাসনিক রিপোর্ট ছাড়া। এটা শুধু রাজনৈতিক নিম্নতা স্পর্শ করল না, যে সাংবিধানিক নৈতিকতা তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন, সেই নৈতিকতারও লঙ্ঘন হল। যে কোনও গণতন্ত্রে আইন তার নিজস্ব পথ নেয় এবং কোনও ঘটনার দায় নির্ধারিত হয় যথাযথ প্রক্রিয়ায় – কোনও রাজনৈতিক বেদীর উচ্চতা থেকে করা একটি ট্যুইটের মাধ্যমে নয়।
সংশ্লিষ্ট ঘটনা ঘটেছিল একটি কেন্দ্রে, যেখানে মানুষ নিজেরাই বিজেপির একজন বিধায়ককে নির্বাচন করেছেন। তথাপি এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের তথাকথিত ‘শক্তিমত্তা’ দেখায় প্রধানমন্ত্রী দ্বিচারিতা অনুভব করলেন না। এই ধরনের অসার এবং অতি- সরলীকৃত সাধারণীকরণ শুধু অপরিণতই নয়, তা দেশের সর্বোচ্চ পদের সঙ্গে মানানসইও নয়।
আরও পড়ুন– ১৫ জন স্ত্রী, ৩০ সন্তান ও ১০০ জন ভৃত্য… প্রাইভেট প্লেন থেকে রাজা নামতেই চমকে উঠলেন সবাই !
যে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে জাতি-হিংসা শুরু হওয়ার ৯৬৪ দিন পরে সেখানে যাওয়ার অবকাশ পেয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে বাংলার জন্য এই সহসা উদ্বেগ কোনও সমবেদনার পরিচয় নয়। বরং, এটাকে সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নাট্যের মতো মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, আমরা সবাই দ্বিধাহীনভাবে হিংসার নিন্দা করি। কিন্তু এটা রাজনৈতিক বুক-চাপড়ানোর সময় নয়। এটা সহায়তা ও নিরাময়ের সময়। এটাও স্পষ্ট যে, বিজেপি সেই ক্লান্তিকর উত্তরবঙ্গ বনাম দক্ষিণবঙ্গের উপাখ্যানে ফিরতে চায়, ভোটের আগে মেরুকরণের আশায়।
স্পষ্ট হয়ে যাক: বাংলা এক – আবেগে, সংস্কৃতিতে, রাজনীতিতে।
প্রধানমন্ত্রীকে বলি: নির্বাচিত রাজ্য সরকারের কথা শুনুন, শুধু নিজের দলের লোকের কথা শুনবেন না। আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কেবল বিজেপির নন। আপনার দায়িত্ব দেশ-নির্মাণ, কাহিনি নির্মাণ নয়।সঙ্কটের এই মুহূর্তে,আমরা যেন বিভাজন না বাড়াই। আমাদের একত্রিত হতে হবে, দলীয় লাইনের ঊর্ধ্বে মানুষের সেবায় – যে মানুষ এখন আমাদের সেবা সবচেয়ে বেশি চাইছে। রাজনীতি আরেকদিন হোক।’’
প্রসঙ্গত নাগরাকাটায় দলীয় সাংসদ ও বিধায়ক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে।