স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে হেমতাবাদ থানার চৈনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কিসমত মালভুমা গ্রামে ৩ কন্যা সন্তান ও স্ত্রী শঙ্করীকে নিয়ে বসবাস করতেন রাম ভৌমিক। তার পৈত্রিক বাড়ি ভরতপুর গ্রামে। বছর খানেক আগে সেখানকার বাড়ি বিক্রি করে এই মালডুমা গ্রামে আসেন তিনি। ফাঁকা জায়গায় একটি মাত্র পরিবারই সেখানে বাস করত। এলাকায় ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত হলেও প্রতবেশীদের সঙ্গে তার খুব মেলামেশা ছিল না কারও। এমনকি খানিকটা দূরের তার ভায়ের বাড়ি। তাদের সঙ্গেও খুব বেশি আসা যাওয়া ছিল না। পাঁচজনের সংসার একটি ভুটভুটি ফাইটার চালিয়ে কোনরকম ভাবে দিন গুজরান করতেন রাম ভৌমিক। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে রাজ্য সরকার আংশিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়। আর তাতেই বন্ধ হয়ে যায় রাম ভৌমিকের ভুটভুটি ভ্যান চালিয়ে রোজগারের পথ। লকডাউনের জেরে যাত্রী না মেলায় প্রায় দিনই তাকে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয়েছে। সংসারের অভাব অনটন ঘিরে ধরেছিল রাম ভৌমিককে। স্ত্রী শঙ্করী দেবী আবার গর্ভবতি হয়ে পড়েছিলেন।সংসার চালাতে বিভিন্ন জায়গায় থেকে ঋন নিয়েছিলেন।
advertisement
শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি জায়গায় পরিবারকে নিয়ে গান শুনতে গিয়েছিলেন তিনি। অধিক রাতে তারা বাড়ি ফেরেন। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। কাউকে কিছু না বলেই চুপচাপ স্বামী রাম ভৌমিক নিজে ও পরিবারের সকলকে নিয়ে একসাথে আত্মঘাতী হওয়ার মতো ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। শুক্রবার রাতে স্ত্রী শঙ্করী সহ তিন মেয়ে এবং নিজে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘরে ঘুমাতে যান। সকলে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর গোটা ঘর সহ ঘুমন্ত স্ত্রী কন্যাদের শরীরে দাহ্য পদার্থ কিছু ঢেলে দেয়। নিজের শরীরেও সেই পদার্থ ঢেলে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন স্বামী রাম ভৌমিক। বদ্ধ ঘরে ঘুমন্ত অবস্থাতেই দুই শিশুকন্যা, স্ত্রী শঙ্করী এবং স্বামী রাম ভৌমিকের সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে মৃত্যু ঘটে। বড় মেয়ে রানী অর্ধ দগ্ধ অবস্থায় ঘর থেকে বেরিরে পড়ে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। স্থানীয় এক ব্যক্তি টের পেয়ে সেখানে পৌঁছান। তিনি এলাকার বাসিন্দাদের খবর দেন। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই সব শেষ হয়ে যায়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘরের মধ্যেই মৃত্যু হয় রাম ভৌমিক(৪০), স্ত্রী শঙ্করী ভৌমিক(৩২), কন্যা ঝর্না ভৌমিক(৭) এবং সরস্বতী ভৌমিক(৪)। অগ্নিদগ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে ও হাসপাতালে ভর্তি করা বড় কন্যা রানী ভৌমিক(১২)। আজ সকালে তারও মৃত্যু হয়।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তে এলাকার বাসিন্দারা সেখানে ভিড় জমান। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল ঘরে মধ্যে দেহাংশের বেশ কিছু অংশ পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন হেমতাবাদের বিধায়ক সত্যাজিৎ বর্মন।তিনি জানান, তার কেন্দ্রে এই মর্মান্তিক ঘটনায় তিনি শোকাহত। কেন এই ঘটনা ঘটল পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।স্থানীয় বাসিন্দা সাজিদুল রহমান জানান, রাম ভৌমিকের আর্থিক অনটন থাকলেও কাউকে তিনি কোন দিনই বলেননি। উপার্জনের একমাত্র পথ ছিল ভুটভুটি গাড়ি।সেখান থেকে আয় না হওয়ায় সেটিও বিক্রি করে দিয়েছিল। ঝাঁড়ু বিক্রি করে তার সংসার চলছিল। তাদের অনুমান আর্থিক অনটনের কারণে এই ধরনের মারাত্মক পথ বেছে নেন রামবাবু।