বছর ১৩-র ঊর্মি। ময়নাগুড়ির মেয়ে, ভাল করে পড়াশোনা করার জন্য মালবাজারে মামাবাড়িতে থাকত। বাঙালি বাড়িতে বলা হয়, মামাবাড়ি ভারী মজা। সেই মজা হল না ঊর্মির। পুজোর সময় মা এসেছিল মেয়ের কাছে। মেয়ের হাত ধরে বাকিদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল দশমীর মেলায়৷ মাল নদীর পাড়ে ভাসান দেখে, পাঁপড়, ফুচকা খেয়ে, ছোট মেয়ের আবদার ছিল, জলে ঠাকুর ফেলা দেখতে যাবে। আবদারে সায় ছিল অভিভাবকদের। ব্যস আর কি! তিরতিরে স্রোতের মাল নদীর জলে পা ভিজিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল নদীর মাঝের চরে৷ কে-ই বা জানত। ওই যে দূরের পাহাড় দেখা যাচ্ছে, সেখানে তখন আকাশ কালো করে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি নেমেছিল। সেই বৃষ্টির নেমে আসা জলে ভেসে গিয়েছে ঊর্মি। গিয়েছিল মায়ের হাত ধরে৷
advertisement
আরও পড়ুন: জেলায় জেলায় শীতের আমেজ, আগামী কয়েকদিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিন
চেষ্টা করেছিল পাথর, কাঠামো। না জানে আরও কত কী… কিন্তু পাগল নদী তখন আর কার কথা শোনে। ফলে ঊর্মি ভেসে গিয়েছে জলের তোড়ে। এদিন সকালে ঊর্মির মামা সন্তু সাহা বলছিলেন, “কাকে ছেড়ে কাকে বাঁচাব? ওরা ভেসে যাচ্ছে। কান্নার আওয়াজ চারিদিক জুড়ে। আমি দিদিকে যে কোনও ভাবে পাড়ে তুললাম। ভেসে গেল আমার ভাগ্নিটা।”
ঊর্মি নেই, যদিও ভাগ্নীর ঘর আজও একই রকম আছে। ঘর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জামা, নতুন সাজার জিনিস। ব্যাগটা বেশ যত্নে রাখা। কিন্তু কে নেবে সেসব আর? ছোট মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ গোটা বাড়ি। সপ্তম শ্রেণীর এই ছাত্রী ছাড়াও সাহা পরিবার হারিয়েছে আর একজনকে। রুমু সাহা, সম্পর্কে ঊর্মির মামী। সব হারিয়ে যন্ত্রণায় কাতর মালবাজারের সাহা পরিবার।