এসেছে নতুন বছর। দেশে প্রতিদিনই নতুন করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। পশ্চিম পাড়ের দেশ হয়ে ঘাতক টাইফুনের মতো সে প্রবেশ করেছে ভারতেও। মহারাষ্ট্র, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যে রোজই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কোথাও কোথাও উৎসবের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিধিনিষেধ। মুম্বই মায়ানগরীর মায়া ত্যাগ করে এখন একরঙা সাদাকালো। বিকেল থেকে সেখানে জমায়েত নিষেধ, এমন কী সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকাতেও নিষেধাজ্ঞা। দিল্লিতে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে স্কুল-কলেজ। চেনা আতঙ্কের ছাপ ফিরে এসেছে মানুষের চোখে মুখে, ফিরে এসেছে আত্মজন বিয়োগের আতঙ্ক। তবু ২৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১-এর রাত, পার্কস্ট্রিটে ভিড় করেছেন মানুষ। পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। শুক্রবার কলকাতার রঙিন থেকেছে সারাদিন। ভিড় হয়েছে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়ায়।
advertisement
আরও পড়ুন: আতঙ্ক-উদ্বেগ চরমে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার! কলকাতাতেই ১৯৫৪
এ শহরও খুব একটা ভাল নেই। করোনার প্রথম হয়ে দ্বিতীয় ঢেউয়ে বারবার প্রাণচঞ্চলা তিলোত্তমা আটকা পড়ে গিয়েছে ঘরে। আটকা পড়েছে হাসপাতালের বেডে, মুখ ঢেকেছে মাস্কে! অক্সিজেনের অভাবে হাঁফিয়ে উঠেছে কোনও এক আঁধার রাতে। ক্রমে টিকাকরণের হার বৃদ্ধি সেই হাঁফিয়ে ওঠা ফুসফুসে পৌঁছে দিতে শুরু করেছিল অক্সিজেন। তার মধ্যেই এসেছে দানবীয় ওমিক্রন। শেষ এক সপ্তাহে, সামান্য দু'শোর ঘর থেকে একে বারে দু'হাজারে পৌঁছে গিয়েছে করোনা সংক্রমণ। কলকাতাকে যেন ফের গ্রাস করছে রোগের অন্ধকার। তবু রঙ আছে। নতুন বছরের আগের হপ্তা ধরে চোখ টেনে সেজেছে পার্কস্ট্রিট, সেজেছে বো-ব্যারাক। কেক এসেছে ঘরে ঘরে, মাথায় চড়েছে সাদা-লাল সান্টা টুপি। এত বিয়োগ, এত বিষাদের মধ্যেও তাই আছে আনন্দ, আছে সব ভুলে থাকার ইচ্ছা। সেলফিতে তাই বিষাদকে থাপ্পড় মেরে ঠিক জেগে ওঠে ষোড়শীর হাসি মুখ। ঠিক নিয়ম করে প্রেমিকার হাত ধরে ময়দানে বসে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখে প্রেমিক। তাই তিলোত্তমাও বেঁচেবর্তে থাকে, এই এতগুলো জীবন্ত ফুসফুসের লাবডুব ছন্দের দাপটে।
আরও পড়ুন: ১১টি মাইক্রো কন্টেনমেন্ট পয়েন্ট ঘোষণা করল কলকাতা পুরসভা, সংক্রমণ রুখতে কড়া প্রশাসন
নতুন বছর, তাই যতই অনিশ্চিত হোক, যতই রোগাক্রান্ত হোক, তা শুভই! কারণ তা নতুন, কারণ তা নিয়ে আসে আস্ত একটা আনন্দের ঝুলি। মাথায় ঘুরতে থাকে আবারও একটা দুর্গাপুজোর কথা, আবারও একটা নতুন জন্মের কথা। তাই নতুন বছর কখনও অশুভ হয় না। তাই, হ্যাপি নিউ ইয়ার।
