স্বপ্নের মতো নগরী। চারধাম যাত্রার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। সারা বছরই এখানে কমবেশি পুণ্যার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। এই শহর থেকেই মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে হচ্ছে NTPC হাইডেল প্রজেক্ট। এই প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন পাহাড়ে ঘটানো হচ্ছে একের পর এক বিস্ফোরণ। খোঁড়া হচ্ছে সুড়ঙ্গ।
advertisement
যোশীমঠের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন,এমন বিস্ফোরণে মাটি এমন কাঁপত যে, মনে হতো যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য এই ধরনের বিস্ফোরণ শুরু হতেই যোশীমঠের বিভিন্ন রাস্তায়, গৃহস্থ বাড়িতে ফাটল দেখা দিতে শুরু করে। গত তিন মাস ধরে একের পর এক চিঠিতে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুরস্ক সিং ধামিকে এই কথা জানাতে থাকেন যোশীমঠের একাধিক বাসিন্দা। কিন্তু সেই চিঠির কোনও উত্তর আসেনি বলেই অভিযোগ।
অন্যদিকে, NTPC হাইডেল প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, যোশীমঠ বিপর্যয়ে তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই।
জানা গিয়েছে, গত কয়েকমাসে, ফাটলের কথা জানিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে মোট তিনটি চিঠি লিখেছেন যোশীমঠের বাসিন্দারা। প্রত্যেকটি চিঠিতেই তাঁদের উদ্বেগের কথা, আসন্ন বিপদ, আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছিল।
যোশীমঠের একটি হোটেলের মালিক, ঠাকুর সিং রানা বলেন, "গত বছর থেকে এই অবস্থা চলছে। যেখানে সেখানে ফাটল দেখা দিচ্ছে। আমরা অনেক চিঠি লিখেছি। জানিয়েছি, যে NTPC প্রজেক্টের সু়ড়ঙ্গ খোঁড়ার বিস্ফোরণের জন্যই এটা হচ্ছে। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। একবার শুধু জেলাশাসক এসে পরিদর্শন করে গিয়েছিলেন। ব্যস!"
অন্যদিকে, চামোলির জেলাশাসক হিমাংশু খুরানা স্বীকারও করেছেন যে, যোশীমঠের বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রীকে এবং তাঁকে একাধিক চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু হিমাংশুর দাবি, তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না যে তিনি কী করবেন। তাছাড়া, NTPC-কে বিষয়টি জানানো হলে, তারা জানায়, সমস্ত গাইডলাইন মেনেই কাজ এগোচ্ছে।
যোশীমঠ বিপর্যয়ের পরে NTPC একটি লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা শহরের নীচে কোনও সুড়ঙ্গ খোঁড়েনি, এখন এলাকায় কোনও বিস্ফোরণ ঘটানোও হচ্ছে না। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার মেশিন শুধুমাত্র বড় কিছু নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
শীতকালে এই যোশীমঠেই অবস্থান করেন শ্রী বদ্রীনাথ। ওখান থেকেই শিখ তীর্থ হেমকুণ্ড সাহিবে যাওয়া যায়। বর্তমানে এই পুণ্যস্থানকেই অতি ধসপ্রবণ এলাকা হিসাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এলাকায় মোতায়েন রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ানেরা। হেলিকপ্টারে করে চলছে নজরদারি। স্থানীয়দের দাবি মেনে, যোশীমঠ সংলগ্ন এলাকায় যে সমস্ত প্রকল্পের কাজ চলছিল, যেমন, হেলাঙ-মারওয়ারি বাইপাসে চারধাম অল ওয়েদার রোড, NTPC প্রকল্পের কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
যোশীমঠের বাসিন্দাদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাহাড়ে ক্রমাগত নির্মাণকাজ চালিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করাই যোশীমঠের এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। অন্যদিকে, বিশেজ্ঞেরা দাবি করেছেন, শুধুমাত্র নির্মাণকাজ নয়, এই বিপর্যয়ের পিছনে প্রাকৃতিক কারণও অনেকাংশেই দায়ী।