৩৬ বছর বয়সি ড. উমর ছিল তথাকথিত “হোয়াইট-কলার টেরর ইকোসিস্টেম”-এর অংশ — অর্থাৎ শিক্ষিত, পেশাদার মুখোশের আড়ালে সক্রিয় এক সন্ত্রাসচক্র। তার সঙ্গে যুক্ত ছিল আরও দুই চিকিৎসক — ড. আদিল আহমদ রাঠার ও ড. মুজাম্মিল শাকিল, যারা লালকেল্লা বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগেই গ্রেফতার হয়।
advertisement
এই চক্রের মাধ্যমে প্রায় ২,৯০০ কিলোগ্রাম IED তৈরির উপকরণ উদ্ধার হয়েছিল ফরিদাবাদে এক অভিযানে। সেই বিশাল বিস্ফোরক ভাণ্ডার ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেফতারই নাকি ড. উমরের শেষ সিদ্ধান্তকে উসকে দেয়। তদন্তকারীদের মতে, ধরা পড়ার মুখে পড়ে JeM-এর এই সদস্য শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী হামলার পথ বেছে নেয়।
মারণ সফর: ফরিদাবাদ থেকে লালকেল্লা পর্যন্ত
তদন্তে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ধরা পড়েছে ওই সাদা হুন্ডাই i20 (HR 26CE 7674) গাড়িটির গতিপথ।
সকাল ৭:০০ নাগাদ: প্রথমবার গাড়িটিকে দেখা যায় ফরিদাবাদের এশিয়ান হাসপাতালের কাছে।
সকাল ৮:১৩: পরের ফুটেজে ধরা পড়ে বদরপুর টোলপ্লাজার ক্যামেরায়— চালকের আসনে ছিলেন মুখোশধারী এক ব্যক্তি, যাঁকে উমর হিসেবে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এখান থেকেই গাড়িটি দিল্লির সীমানায় প্রবেশ করে।
দুপুর ৩:১৯: গাড়িটি পৌঁছায় লালকেল্লার আশপাশে, সুনেহরি মসজিদের পাশে পার্কিং জোনে ঢোকে।
তিন ঘণ্টার নীরব অপেক্ষা
এই পার্কিংয়ের সিসিটিভি ফুটেজই এখন তদন্তের মূল চাবিকাঠি।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, গাড়িটি ঢোকার মুহূর্ত থেকে বেরোনোর আগ পর্যন্ত— পুরো সময়টা গাড়ির ভিতরেই ছিল উমর।
সময়: বিকেল ৩:১৯ থেকে সন্ধ্যা ৬:৪৮— প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে গাড়ির ভেতর অপেক্ষা।
কেউ নামেননি: সেই সময়ের মধ্যে উমর একবারও গাড়ি থেকে নামেনি।
এই দীর্ঘ অপেক্ষা তদন্তকারীদের মতে, বিস্ফোরক (Ammonium Nitrate Fuel Oil বা ANFO) সক্রিয় করার প্রস্তুতি হতে পারে, কিংবা তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সন্ধ্যার ব্যস্ততম সময়টার জন্য অপেক্ষা করছিল— যাতে ক্ষয়ক্ষতি সর্বাধিক হয়।
শেষ মুহূর্ত: চার মিনিটের ব্যবধান
সন্ধ্যা ৬:৪৮-এ গাড়িটি পার্কিং এলাকা ছাড়ে।
৬:৫২-এ, লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে সুবাস মার্গের ট্রাফিক সিগন্যালের পাশে গাড়িটি থামে— এবং মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
ফরেনসিক দল বর্তমানে উমরের পরিবারের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে, যাতে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া দেহাংশের সঙ্গে মেলানো যায় এবং নিশ্চিত করা যায়, সে কি সত্যিই ওই গাড়ির একমাত্র আরোহী ছিল? সেই কি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল?
তদন্তে ইঙ্গিত: একক আত্মঘাতী পদক্ষেপ
সব সূত্র মিলে এখন একটাই ধারণা স্পষ্ট হচ্ছে— ধরা পড়ার আগে নিজের পরিকল্পনার শেষ টুকরো বাস্তবায়ন করতেই মরিয়া হয়ে উঠেছিল ড. উমর।