আর এই অনুপ্রেরণামূলক উন্নয়নের পটভূমিতে, আমরা আমাদের সমৃদ্ধির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি: আমাদের রাস্তা, শহর, অফিস, কারখানা এবং স্কুল সবই অগ্রগতির আলোয় ঝলমল করছে। আমাদের সমাজের লোকেরা সুস্থ জীবনযাপন করছে, তারা উদ্যমী এবং তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আজ তৃপ্ত, তারা সকলেই সমৃদ্ধি এবং সুখ উপভোগ করছে। আর এই যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আজ আমাদের সামনে এসেছে তার জন্য মূলত বিশ্বের বৃহত্তম স্যানিটেশন প্রোগ্রাম, স্বচ্ছ ভারত মিশন সম্পূর্ণ কৃতিত্বের অধিকারী।
advertisement
স্বচ্ছ ভারত মিশন, এটি এমন একটি সবচেয়ে বড় কর্মসূচি, যা শুধুমাত্র সমাজের দরিদ্র শ্রেণী নয়, সমাজের প্রত্যেকের জন্য জীবনের মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে আমাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। মাত্র এক দশক আগে, আমাদের থাকার জায়গাগুলি আজকের থেকে একেবারেই আলাদা ছিল – এখন প্রতিটি ভারতীয়র জন্য টয়লেট আছে, তা সে স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে, রাস্তায়, রেলপথে, পাবলিক স্পেসে এবং আমাদের বাড়ির মধ্যে যেখানেই হোক।
কিন্তু তা সত্ত্বেও, শুধুমাত্র টয়লেটে প্রবেশাধিকার প্রদান করা নিজে থেকে কিছু মানসিকতার পরিবর্তন করে না। তাই এখনও বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, অনেক ভারতীয়, টয়লেটকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। ভারতের শহরাঞ্চলে, আমাদের জনসংখ্যার অধিকাংশই স্যানিটেশন সংক্রান্ত কাজকে কোনো না কোনোভাবে ‘নিম্নমানের কাজ’ হিসেবে দেখে। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষকেই শেখানো হয় না যে কীভাবে নিজেদের টয়লেট পরিষ্কার করতে হয়। কাজেই এইরকম চিন্তাধারার সমাজে আমাদের পাবলিক টয়লেটগুলি প্রায়শই যে নোংরা হয়ে থাকে তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই, তাই না?
আমরা আমাদের টয়লেট পরিষ্কার রাখার জন্য স্যানিটেশন কর্মীদের উপর অনেক বেশি নির্ভর করি, এবং তবুও, এই মানুষগুলোর সঙ্গে আজও প্রায়ই অন্যায়ভাবে আচরণ করা হয় এদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়।
বেশিরভাগ স্যানিটেশন কর্মী অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করেন। তাঁদের কাজটি প্রায়শই বেশ বিপজ্জনক হয় – তাঁদের ক্ষতিকারক এমনকি প্রাণঘাতী গ্যাসে ভরা সেপটিক ট্যাঙ্কে প্রবেশ করে হাত দিয়ে মানুষের মলমূত্র পরিষ্কার করতে হয়, বিষাক্ত গ্যাসের কারণে তারা ঐ ট্যাঙ্কের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এমনকি চেতনা হারিয়ে ফেলে তাঁদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, সাধারণভাবে, উপযুক্ত বা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত কর্মী নিরাপত্তা নীতির কারণে উদ্ভূত সংক্রমণ, শারীরিক আঘাত এবং রোগের প্রকোপে পড়তে পারেন। অনেক স্যানিটেশন কর্মীদের মৌলিক সুরক্ষামূলক গিয়ার যেমন গ্লাভস, জুতো এবং মাস্ক পর্যন্ত সরবরাহ করা হয় না।
বর্ষাকালে স্যানিটেশন কর্মীদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ
বর্ষা মরসুমে স্যানিটেশন কর্মীরা যে চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন হন সেগুলি বহুগুণ বেড়ে যায়:
- ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার কারণে জলবাহিত রোগের সংক্রমণ বেড়ে যায়: স্যানিটেশন কর্মীরা প্রায়শই বৃষ্টির জল, পয়ঃনিষ্কাশন এবং কঠিন বর্জ্যের সরাসরি সংস্পর্শে আসেন, যার ফলে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং পরজীবীর সংক্রমণ হয়ে তাঁদের কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, লেপটোস্পাইরোসিসের মতো রোগ এবং ডায়রিয়া হয়।
- পিচ্ছিল এবং কর্দমাক্ত অবস্থায় কাজ করার সময় দুর্ঘটনা এবং আঘাতের উচ্চ ঝুঁকি: স্যানিটেশন কর্মীদের ভারী সরঞ্জাম এবং যানবাহন নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হয় যা তাদের নিরাপত্তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- বৃষ্টির জলে ভেসে আসা বিপজ্জনক বর্জ্য এবং দূষিত পদার্থের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা: স্যানিটেশন কর্মীরা মেডিক্যাল বর্জ্য, রাসায়নিক বর্জ্য, ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থের সংস্পর্শে আসতে পারেন যা সঠিকভাবে অপসারণের ব্যবস্থা না করলে তাঁদের স্বাস্থের ওপর গুরুতর ফেলতে পারে। তাঁরা মৃত প্রাণী, মানুষের দেহাবশেষ বা বিস্ফোরক পদার্থের সম্মুখীন হতে পারেন যা শারীরিক বা মানসিক ট্রমার কারণ হতে পারে।
- সঠিক পরিকাঠামো এবং সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব যা বিপদ বাড়িয়ে তোলে: স্যানিটেশন কর্মীরা প্রায়শই টয়লেট, পানীয় জল, শাওয়ার এবং চেঞ্জিং রুমের মতো মৌলিক সুবিধাগুলির অ্যাক্সেসের অভাবের সম্মুখীন হন। তাদের কাছে রেইনকোট, বুট, গ্লাভস, মাস্ক, গগলস্ এবং হেলমেটের মতো পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (PPE) নেই যা তাদের ক্ষতিকারক পদার্থ এবং আঘাতের থেকে রক্ষা করতে পারে।
পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রদান
নিয়োগকর্তারা কিছু মৌলিক ব্যবস্থা নিতে পারেন যা স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য ও তাঁদের সার্বিক মঙ্গলের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে:
- সমস্ত স্যানিটেশন কর্মীদের পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (PPE) সরবরাহ করা এবং তাদের যথাযথ ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
- কর্মস্থল এবং ডিপোতে পরিষ্কার জল, সাবান এবং টয়লেটে প্রবেশাধিকার প্রদান এবং নিয়মিত হাত ধোয়া এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনকে উৎসাহিত করা।
- অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (OSH) সচেতনতার মান এবং অনুশীলনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সচেতন করা, যেমন লাইভ তারের সাথে যোগাযোগ এড়ানো, প্লাবিত এলাকা এবং ধারালো বস্তু থেকে সাবধান থাকা। আঘাত বা অসুস্থতার ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে সঠিক চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা করা।
- সমস্ত স্যানিটেশন কর্মীদের চাকরির স্ট্যাটাস বা চুক্তির ধরন নির্বিশেষে, স্বাস্থ্য বীমা, অসুস্থতার কারণে ছুটি এবং আঘাত বা অসুস্থতার জন্য ক্ষতিপূরণের মতো সামাজিক নিরাপত্তামূলক সুবিধাগুলি প্রদান করা।
- স্যানিটেশন কর্মীদের কাজ এবং মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সম্মান করা এবং তাদের কাজের সাথে সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলিতে তাদের অন্তর্ভুক্তি এবং অংশগ্রহণের যথাযথ প্রচার করা।
পরিবর্তনের হাওয়া
2019 সালে স্বচ্ছ ভারত মিশনের প্রথম পর্বের শেষে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, একটি প্রতীকী ভঙ্গিতে, পাঁচজন স্যানিটেশন কর্মীর পা ধুয়ে দিয়েছিলেন। এটি সমগ্র জাতির কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে যে, স্যানিটেশন কর্মীরা সমাজের একটি অপরিহার্য অংশ এবং তাদের কাজকে স্বীকৃত ও সম্মানিত করা দরকার।
হার্পিক, ল্যাভেটরি কেয়ার বিভাগে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড, বহু বছর ধরে স্যানিটেশন কর্মীদের জন্য সদর্থক ভূমিকা নিয়ে কাজ করে আসছে। হার্পিক 2016 সালে ভারতের প্রথম ওয়ার্ল্ড টয়লেট কলেজ স্থাপন করেছে, যার উদ্দেশ্য হল ম্যানুয়ালভাবে কাজ করা এই কর্মীদের অর্থাৎ মেথরদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের মর্যাদাপূর্ণ বিকল্প জীবিকাগুলির সাথে সংযুক্ত করা। কলেজটি স্যানিটেশন কর্মীদের তাদের অধিকার, স্বাস্থ্যের ঝুঁকি, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প জীবিকার দক্ষতা সম্পর্কে শিক্ষিত করে তাদের জীবনকে উন্নত করার লক্ষ্যে জ্ঞানের আদানপ্রদানের একটি সঠিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে। কলেজের প্রশিক্ষিত কর্মীদের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। ঋষিকেশে এই ধারণার সফল প্রমাণের পর, হারপিক, জাগরণ পেহেল এবং মহারাষ্ট্র সরকারের সাথে পার্টনারশিপে মহারাষ্ট্র, ঔরঙ্গাবাদে বিশ্ব টয়লেট কলেজ খোলা হয়েছে।
হারপিকের ওয়ার্ল্ড টয়লেট কলেজ তৈরির এই উদ্যোগ এই পুরো পেশাকে উন্নত করে – এটিকে আর অদক্ষ, নোংরা কাজ হিসাবে দেখা হয় না। এটিকে এখন একটি সম্মানজনক পেশা হিসাবে দেখা হয় যার জন্য নির্দিষ্ট দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণ প্রয়োজন আর এর পাশাপাশি স্যানিটেশন কর্মীদের প্রশিক্ষিত, দক্ষ পেশাদার হিসাবে দেখা হয় যারা প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করে।
সচেতনতা এবং শিক্ষার মাধ্যমে সহানুভূতি তৈরি করা
হারপিক এবং নিউজ 18 মিশন স্বচ্ছতা অর পানি কর্মসূচী বাস্তবায়িত করতে একত্রিত হয়েছিল, এটি এমন একটি আন্দোলন যা অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশনের কারণকে সমর্থন করে যেখানে সমাজের প্রত্যেকের পরিষ্কার টয়লেটে অ্যাক্সেস রয়েছে। এটি সমস্ত লিঙ্গ, যোগ্যতা, বর্ণ এবং শ্রেণীর জন্য সমতার পক্ষে সমর্থন করে এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে পরিষ্কার টয়লেট সমাজের সকল মানুষের মধ্যে ভাগ করা একটি অধিকার ও দায়িত্ব।
মিশন স্বচ্ছতা অর পানি মাঝে মাঝে মিস করে যাওয়া সূক্ষ্মতাগুলিকে পুনরায় স্থাপন করার জন্য একটি দুর্দান্ত কাজ করেছিল৷ এই বছরের শুরুর দিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের একটি ইভেন্টের অংশ হিসাবে, মিশন স্বচ্ছতা অর পানি হার্পিক ওয়ার্ল্ড টয়লেট কলেজের বেশ কিছু স্যানিটেশন কর্মীদের কাজকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের হয়ে কণ্ঠ দিয়েছিল এবং তাদের গল্পগুলি প্রদর্শন করেছিল। পদ্মশ্রী ঊষা চৌমার (প্রাক্তন স্যানিটেশন কর্মী, এখন সুলভ ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সার্ভিস অর্গানাইজেশনের সভাপতি) তার যাত্রা সম্পর্কে বক্তৃতা করেছিলেন: বঞ্চিত হওয়া থেকে শুরু করে স্বচ্ছতা হিরো হিসেবে স্বীকৃত হওয়া পর্যন্ত তার যাত্রা নিয়ে যিনি প্যানেলে নিয়মিত এবং বৃহত্তর স্যানিটেশন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এটি সমাজের দৃষ্টি উন্মোচনকারী একটি আলোচনা ছিল যা স্পষ্টতই দেখাতে সক্ষম হয়েছিল যে, সচেতনতার সঠিক পরিণাম সকলের জন্য কতটা মঙ্গলদায়ক হয়। একবার আমরা স্যানিটেশন কর্মীদের দুর্দশার দিকে চোখ মেলে তাকালে, তাদের কিছু কষ্ট লাঘব করা কতটা সহজ আমাদের তাই শিখিয়েছিল, আমরা এমন একটি পৃথিবীতে কখনই ফিরে যেতে চাই না যেখানে মানুষকে হাত দিয়ে মলমূত্র তুলতে হয় বা নিরাপত্তা লাইন ছাড়াই সেপটিক ট্যাঙ্কে প্রবেশ করতে হয়। অকারনেই নিজেকে প্যাথোজেন এবং অন্যান্য ঝুঁকির সম্মুখীন করতে হয়।
এভাবেই পৃথিবী বদলে যায় – শেখার ও দেখার মাধ্যমে। আপনি কীভাবে আমাদের সকলের জন্য সমতা, নিরাপত্তা এবং মর্যাদার বার্তা প্রসারিত করতে পারেন সে সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের সাথে যোগ দিন এখানে।