আসলে বরাবরই মাইক্রোসফট (Microsoft) সংস্থায় চাকরি করার স্বপ্ন দেখতেন যশ। সম্প্রতি সেখান এসেছে থেকেই কাজের ডাক। আর খুব শীঘ্রই তিনি সেখানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করবেন। তবে মজার বিষয় হল, যশের এই স্বপ্ন পূরণে কিন্তু অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করেছে ইউটিউব (YouTube)। কিন্তু কীভাবে?
advertisement
আসলে আমরা অনেকেই ইউটিউব দেখে রান্নাবান্না, গয়না তৈরি কিংবা পোশাক তৈরি-সহ বিভিন্ন কিছু শিখে থাকি। কিন্তু ইউটিউব থেকে যশের শেখাটা সেই সবের থেকে অনেকটাই আলাদা! তাই আজ যশের স্বপ্ন পূরণের সফরের সেই গল্পই তো শোনাব আমরা।
মাত্র আট বছর বয়সেই কনজেনিটাল গ্লুকোমার জেরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন যশ। কিন্তু দৃষ্টি ম্লান হয়ে এলেও স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি তিনি। শহরেই ক্যান্টিন চালান যশের বাবা। ছেলেকে তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্কুলে ভর্তি করে দেন। এর পর সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে রেগুলার স্কুলে ভর্তি হন যশ।
২০১৭ সালে ইন্দোরের গরিমা বিদ্যা বিহার থেকে বিজ্ঞান বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করেন তিনি। তার পর জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেন পরীক্ষায় পাশ করে কম্পিউটার সায়েন্স বিটেক করার জন্য শ্রী গোবিন্দ্রম শেকসরিয়া ইনস্টিটিউ অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (SGSITS)-এ ভর্তি হন। ২০২১ সালে সেখান থেকে বিটেক পাশ করেন ওই যুবক।
এর পর হাতে কোনও কাজ না-থাকায় ইউটিউব থেকেই কোডিং শিখতে শুরু করেন তিনি। তবে বিষয়টা ততটাও সহজ ছিল না ওই যুবকের জন্য। কারণ যশের ক্ষেত্রে মূলত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর প্রতিবন্ধকতাই।
আর সেই বাধাকেই জয় করেছেন যশ। কারণ তিনি আজ মাইক্রোসফটে যে চাকরিটা পেয়েছেন, তা একেবারেই তাঁর ডিগ্রির জোরে নয়। বরং তিনি চাকরিটা পেয়েছেন তাঁর নিজের শেখা কোডিংয়ের জন্যই! সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মাইক্রোসফটের সিলেকশন রাউন্ডে ছিল বিভিন্ন ধরনের কোডিং চ্যালেঞ্জ এবং তিনটি ইন্টারভিউ।
যশ নিজেই সেই সাফল্যের গল্পটা শুনিয়েছেন। তিনি বলেন যে, “কলেজ পাশ করার পরে আমি ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কোডিংয়ের বিষয়ে আমার অল্পস্বল্প জ্ঞান ছিল। তবে তা মাইক্রোসফটে কাজ পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। আর সেখানে ক্যাম্পাস প্লেসমেন্টের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া যায় না। তাই কলেজ পাশ করার পরে আমি বাড়িতেই কোডিং নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করি।
আরও পড়ুন- স্ত্রীর উপবাসের জন্য চিকিৎসকের বিলম্ব, মায়ের কোলে ৫ বছরের শিশু বিনা চিকিৎসায় চিরঘুমে
সেই সঙ্গে চলে কোডিংয়ের অনুশীলনও। তবে সেটাও পর্যাপ্ত ছিল না। তাই আমি আরও দক্ষ হওয়ার জন্য ইউটিউবকে কাজে লাগাই। সেখান থেকে কোডিং শিখতে শুরু করি। অবশ্য এই বিষয়ে আমার বন্ধুদেরও সাহায্য নিয়েছি। আসলে তাঁরা সকলেই ভালো ভালো সংস্থায় কাজ করছে।”
এর পর মাইক্রোসফটে চাকরি পাওয়ার প্রসঙ্গে যশ জানিয়েছেন, তাঁকে চার রাউন্ডের বাছাই-পর্বের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। প্রথমে তিনি অনলাইন টেস্ট দিয়েছিলেন।
এর পর তাঁকে প্রাথমিক স্তরের কয়েকটি ইন্টারভিউতে বসতে হয়েছিল। ওই যুবকের কথায়, “তিন রাউন্ডের কোডিং ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল উন্নত চিন্তা-ভাবনা সংক্রান্ত একটা রাউন্ডও।
বিষয়টা উদাহরণ দিয়ে বলা যাক - যদি কাল নেটফ্লিক্স না-থাকে, তা-হলে আপনি কীভাবে এই ধরনের অ্যাপ তৈরি করবেন। আসলে যাঁরা ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন, তাঁরা এ-ভাবে এটাই দেখতে চাইছিলেন যে, একটা মানুষ কীভাবে যুক্তি-সহ কোনও সমস্যার সমাধান বার করতে পারে।”
এই অনলাইন ইন্টারভিউ হয়েছিল এপ্রিল এবং মে মাসে। বর্তমানে ফ্রেশার হিসেবে যোগ দিতে চলা ওই যুবকের প্যাকেজ ইনসেন্টিভ-সহ ২০ লক্ষ টাকারও বেশি, সেই সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি থাকবে মাইক্রোসফটের স্টকও।
যশ জানিয়েছেন যে, তাঁর বেস প্যাকেজ ১৫ লক্ষ টাকা, সেই সঙ্গে থাকবে ৫ লক্ষ টাকার বোনাস এবং ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের স্টক, যা চার বছরের জন্য আন-লক করা থাকবে।
আগামী ৫ সেপ্টেম্বরই সেই স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপে পা রাখতে চলেছেন যশ, কারণ ওই দিনই মাইক্রোসফটে কাজে যোগ দিচ্ছেন তিনি। প্রথম দিকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম চলবে। এর পর হয়তো বেঙ্গালুরুর অফিসে যোগ দিতে হবে। ফলে অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকটা দিনের!