১২ নভেম্বর উত্তরকাশীর ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে কাজ করছিলেন শ্রমিকদের একটি দল। সাড়ে আট মিটার উঁচু এবং প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সেই সুড়ঙ্গে কাজ করার সময় হঠাৎ ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের একাংশ। অন্ধকার সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে পড়েন ৪১ জন কর্মী। আটকে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন এ রাজ্যের তিন বাসিন্দাও। ঘটনাস্থলে আসে উদ্ধারকারি দল, প্রশাসন। উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় বাহিনী। উদ্ধারকাজে হাত লাগান ইন্দো-টিবেটান পুলিশ এবং বর্ডার রোডওয়েজের বাহিনীও।
advertisement
লড়াই চলতে থাকে সুড়ঙ্গে! দুটো লড়াই। একদিকে শ্রমিকদের উদ্ধার করার লড়াই। অন্যদিকে, অন্ধকার সুড়ঙ্গে শ্রমিকদের বেঁচে থাকার লড়াই। উদ্ধারকাজের প্রথম পর্যায়েই ধাক্কা খান উদ্ধারকারীরা। তিন দিনের মাথায় উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে পাইপ ঢোকাতে গিয়ে নতুন করে ধস নামে। উদ্ধারকারী দলের দু’জন সদস্য জখম হন। থমকে যায় উদ্ধারকাজ। দিল্লি থেকে নতুন যন্ত্র এনে আবার উদ্ধারকাজ শুরু হয়। এরপর কেটে গিয়েছে আরও ১৪ দিন। অবশেষে আজ, ২৮ নভেম্বর, সোমবার শুরু হয় ‘র্যাট-হোল মাইনিং’। ভারতে এই প্রক্রিয়া নিষিদ্ধ। বিশেষত কয়লাখনিতে এই প্রক্রিয়ায় কাজ হয়। শ্রমিকেরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে খনিতে নামেন। অল্প জায়গায় সরু গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে এগিয়ে চলেন। ঠিক ইঁদুর যেভাবে গর্ত খোঁড়ে। প্রয়োজনীয় কয়লা তুলে আবার ওই একই পদ্ধতিতে বেরিয়ে আসেন শ্রমিকেরা । উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে শ্রমিকদের বার করতে সেই পদ্ধতিই অবলম্বন করা হয়। মেলে সাফল্য।
অবশেষে সোমবার রাত ৮টা ৩৮ মিনিটের মধ্যে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে বার করা হয় আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিককেই। কাজ শুরু হয় সন্ধে ৭:৪৯-এ। মাত্র আধ-ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ-জয়! সুড়ঙ্গ থেকে প্রথমে বেরিয়ে আসেন ঝাড়খণ্ডের বিজয় হোরো। উদ্ধার করার আগে পর্যন্ত সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে সবরকম যোগাযোগ রাখা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। পাইপের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথা চলছিল। পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল খাবার, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।