এয়ার ইন্ডিয়ার তিনটি বিশেষ বিমানে ভারতীয়দের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফেরার চেষ্টায় ভারতীয়রা ভিড় জমাচ্ছেন সে দেশের ভারতীয় দূতাবাসগুলির সামনে। বৃহস্পতিবার ভারতে ফেরা এক পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয় আমাদের। বারাণসীর বাসিন্দা আশিস সিং, বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলি আমরা। তাঁর গলায় আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। জানালেন, বিগত ক'দিন ধরে ইউক্রেনের পরিস্থিতির অবনতি হলেও সে দেশে থাকা কেউই সেভাবে তার ভয়াবহতা বুঝতে পারেননি। আতঙ্ক যাতে না ছড়িয়ে পড়ে তাই স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বিষয়কে যতটা সম্ভব হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করেছে, দাবি আশিসের।
advertisement
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে রুশ আগ্রাসনের খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন পরিজনেরা প্রতিমুহূর্তে যখন তাদের খোঁজ নিতেন, প্রথমদিকে তখন কিছুটা অবাকই লাগত তাদের। রাজধানী শহর কিয়েভের পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। পশ্চিম সীমান্তে অচলাবস্থা তৈরি হলেও রাজধানী শহর কিয়েভে যে কিছু হতে পারে, এমনটা তারা ভাবতেও পারছিলেন না সেই সময়। তাও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি যাঁরা ইউক্রেনে পৌঁছেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরিবারের জোরাজুরিতে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন আশিস।
আরও পড়ুন : শান্তির কথা বললেও ভারত রাশিয়া বিরোধিতা হয়ত করবে না, বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষক
দিল্লি বিমানবন্দরে নামার পরে ইউক্রেনের পরিস্থিতি শুনে তিনি যথেষ্ট উৎকণ্ঠায়। যে ভারতীয় বন্ধুরা এখনও আটকে রয়েছে ইউক্রেনে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পেরেছেন যে ইলেকট্রিসিটি নেই শহরের বেশির ভাগ অংশেই। বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ইন্টারনেট কানেকশনও। একদিন আগেও যখন শহরের সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জিনিসপত্রের দাম প্রায় স্বাভাবিকের কাছেই ছিল, সেখানে হঠাৎ দামও বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। ঠিক সময়ে তিনি যে ফিরে আসতে পেরেছে, ভেবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে আশিসের পরিবার।
আরও পড়ুন : মা কাঁদছেন সারাদিন, হাবড়ার বাসিন্দা নিশা ইউক্রেন থেকে দেশে ফিরলেই যেন মুক্তি
তবে অতটা ভাল ভাগ্য নয় ইউক্রেনে আটকে পড়া হিন্দমোটরের অমিত শর্মার। ব্যবসার কাজে প্রায় ৯ বছর তিনি রয়েছেন ইউক্রেনে। ২০১৪ সালেও পরিস্থিতি অবনতি হতে দেখেছেন অমিত। তবে এ বার এইরকম পরিস্থিতি হতে পারে, আঁচ করতে পারেননি তিনিও। দু’দিন আগেও তাঁর সঙ্গে যখন কথা বলা হয়, তিনি জানান, সবকিছু স্বাভাবিক। এমনকি সে সময় খোলা ছিল শহরের নাইটক্লাবগুলিও।
আরও পড়ুন : গোবরডাঙার স্বাগতা আটকে ইউক্রেনে, গ্রামের বাড়িতে ঘুম নেই মা-বাবার
পরিজনদের অযথা আতঙ্কিত না হতে বলেন তিনি। কিন্তু একদিনে রুশ আক্রমণের পর আমূল পাল্টে গিয়েছে পরিস্থিতি। ভারতীয় দূতাবাসে বসে ব্যস্ততার মধ্যেও নিউজ18 কে তিনি জানান, পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। প্রচুর ভারতীয়র ভিড় রয়েছে দূতাবাসে। সবাইকে সময় ভাগ করে অ্যাটেন্ড করছে দূতাবাস। চেষ্টা চলছে যত দ্রুত সম্ভব ভারতীয়দের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক কখন হবে, এই অপেক্ষায় আতঙ্কের প্রহর গুনছেন ইউক্রেনে আটকে থাকা প্রত্যেক ভারতীয়র পরিজনেরা।
(প্রতিবেদন : সাহ্নিক ঘোষ)