নতুন বছরের শুরুতেই ত্রিপুরায় এসে আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত ৪ জানুয়ারি ত্রিপুরায় এসে নরেন্দ্র মোদি রাজ্যের উন্নয়ন ও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের কাজের ওপরে তাঁর চূড়ান্ত ভরসার কথা জানিয়েছিলেন। মোদির কথায় উঠে এসেছিল HIRA-র সাফল্যের কথা। আর ১৪ মে সেই বিপ্লব দেবের ওপরেই দলের যে আস্থা নেই সেটা তাঁর পদত্যাগের মাধ্যমেই পরিষ্কার বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু কেন সরে গেল বা সরানো হল বিপ্লব দেব'কে? রাজনৈতিক মহলের মতে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে থেকে বিপ্লব দেবকে রেখে ২০২৩-এর ভোটে লড়াই করতে গেলে সুবিধা হবে না। দেওয়াল লিখন কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বিজেপির কাছে। তাই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের পাঠিয়ে তাদের উপস্থিতিতেই কার্যত পদত্যাগে বাধ্য করানো হল বিপ্লব দেব-কে। এ ছাড়া একাধিক বিষয় আছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
advertisement
আরও পড়ুন- বর্ধমান মেডিক্যালে ফের সক্রিয় দালালরা! সব খোয়ালো রোগীর পরিবার
ত্রিপুরায় বিজেপি জেতার পরেই লেনিন মূর্তি ভাঙা নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। গত বছর আগরতলায় বামেদের অফিস ও পত্রিকার অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে দেশ জুড়ে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বিজেপিকে। যা আসলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে পুরভোটে অশান্তি। রাজ্যের একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্ত গন্ডগোল। বিরোধী নেতারা আক্রান্ত। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে ব্যর্থতার দায় সেই বিপ্লব দেবের ওপরেই পড়েছে। আগামী নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা অন্যতম ইস্যু হতে চলেছে রাজ্যে। তাই নয়া মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার কথাতেও উঠে এসেছে আইন-শৃঙ্খলা জনিত ইস্যুর কথা। বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব।
আরও পড়ুন- রাশিফল ২৬ অগাস্ট; দেখে নিন কেমন যাবে আজকের দিন
প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও দলের মধ্যেই একাধিক নেতা বিপ্লব দেবের কাজে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। একটা সময় বিজেপির নেতা সুদীপ রায় বর্মণ-সহ বেশ কয়েকজন বিধায়ক বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানালেও মেলেনি সুরাহা। উল্টে সুদীপকে সরিয়ে দেওয়া হয় স্বাস্থ্য দফতর থেকে। সুদীপ-সহ বেশ কয়েকজন বিধায়ক দল ছাড়ার পরে একাধিক জায়গায় সংগঠনের দুর্বলতা ধরা পড়ে। সেই রিপোর্ট গিয়েছে কেন্দ্রের কাছেও। বিজেপির অন্দরের রিপোর্ট অনুযায়ী বাম-তিপ্রামোথা-তৃণমূলের সঙ্গে লড়তে হলে সংগঠন আরও শক্তিশালী করা দরকার।
২০১৬ থেকে লাগাতার সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ডঃ মানিক সাহা। বুথ স্তরে সংগঠন মজবুত করেছেন। রাজ্য সভাপতি থেকে বৃদ্ধি করেছেন সদস্য সংখ্যা। ফলে বুথ স্তরের মানুষের চাহিদা কী, সেটা তিনি ভালই বোঝেন। তাই বিপ্লবকে সরিয়ে ভরসাযোগ্য মুখ হিসাবে মানিক সাহাকে মনে করছে বিজেপি। সূত্রের খবর, জিম প্রশিক্ষক থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সংগঠনের কাজ করা বিপ্লব দেবকে আপাতত শুধুই সাংগঠনিক দায়িত্বে রাখবে বিজেপি।
সংগঠন থেকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে বিপ্লব দেবকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদে এনেছিল বিজেপি। যদিও তাঁর চার বছরের মেয়াদ কালে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই এর আগে গুজরাত ও উত্তরাখন্ডে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে বিজেপি ৷ সেখানে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরে সাংগঠনিক দায়িত্বে আনা হয়েছিল পদত্যাগীদের। বিপ্লব দেব নিয়ে সেই পথে হাঁটতে চলেছে বিজেপি। একই সাথে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ মানিক সাহা। নিজে চিকিৎসক। ক্রীড়া জগতে তাঁর পরিচয় আছে ৷ সব দলের নেতাদের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই এই স্বচ্ছ মুখকেই ভোটের আগে প্রশাসনে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি।