ত্রিপুরার বিজেপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে খাতায়কলমে জোট না গড়লেও আসন সমঝোতার পথে হাঁটতে চলেছে বাম-কংগ্রেস। একত্রে একটি রাজনৈতিক মিছিলেরও কর্মসূচি নিয়েছে তারা। এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য একলা চলোর নীতি নিয়েই এগোচ্ছে। তবে কানাঘুষো খবর, ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্যের তিপ্রাপোথার সঙ্গেও জোটের দরজা খোলা রাখতে চাইছে ঘাসফুল।
এমন যখন পরিস্থিতি, তখন, বিজেপি-র জোটসঙ্গী আইপিএফটি-কে ত্রিপ্রামোথা-র সঙ্গে জোট গড়ার আহ্বান জানালেন ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য। চিঠি দিয়ে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল আইপিএফটি-এর কাছে। এবার, জানিয়ে দেওয়া হল, সময় কম। তাই এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে আইপিএফটি-কে।
advertisement
গত বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরায় আইপিএফটির সঙ্গে জোট করেছিল বিজেপি। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই দুই দলের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বাড়ে। একাধিক নেতা যোগ দেন রাজার দল তিপ্রামোথা-তে। কিন্তু এবার সরাসরি জোটের প্রস্তাব এসেছে।
আরও পড়ুন: রাত ২টোর সময় অসমের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হঠাৎ ফোন! ওপার থেকে ভেসে এল 'শাহরুখ খান বলছি..'
সূত্রের খবর, শনিবার রাতে গুয়াহাটির হোটেলে তিপ্রামোথার প্রধান প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্যর সঙ্গে বৈঠক করেন আইপিএফটির নেতারা। সেই বৈঠকের পরেই প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্যের তরফে জানানো হয়, "হাতে সময় কম। তাই তড়িঘড়ি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাক আইপিএফটি। আশা করি, তাঁরা দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। একটা দল হিসাবেই আমরা কাজ করতে চাই।"
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ত্রিপুরায় বিজেপি জোট ছেড়ে একাধিক নেতা এবং বিধায়করা অন্য দলে নাম লিখিয়ে চলেছেন। বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে মেবার কুমার জমাতিয়ার উপরে অস্বস্তি ক্রমাগত বেড়ে চলেছিল। একদিকে মন্ত্রিত্ব পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে তাঁকে, আবার অপরদিকে দিল্লিতে একটি কেলেঙ্কারি মামলায় নাম জড়িয়ে পড়ে এই বিধায়কের। পুলিশের জেরার মুখেও পড়তে হয়।
তারপরে মেবার কুমারের পক্ষ থেকে বিজেপি জোটের সঙ্গ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা ইতিমধ্যেই শোরগোল সৃষ্টি করেছে ত্রিপুরা রাজনীতিতে। মেবার কুমার জমাতিয়াকে নিয়ে মোট পাঁচজন বিধায়ক শাসক জোট থেকে পদত্যাগ করেছেন।
সম্প্রতি বিজেপি ছাড়েন সুদীপ রায় বর্মন এবং আশিস দাস। তাঁরা কংগ্রেসের যোগদান করেন। অপরদিকে, আইপিএফটি-র সঙ্গ ছেড়ে ত্রিপুরার বুকে নয়া দল তিপ্রামোথা-তে যোগদান করেন বৃষকেতু এবং বুর্বমোহন ত্রিপুরা। যদিও দলীয় বিধায়কদের পদত্যাগের কারণে দলের উপর বিশেষ কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আর কদিন পরেই ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে শাসক জোট ত্যাগ করে একের পর এক বিধায়ক তিপ্রামোথাতে নাম লেখাচ্ছেন। এর ফলে ত্রিপুরা রাজ্য রাজনীতিতে বড়সড় বদল আসলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিশেষ করে স্বশাসিত পর্ষদের ভোটে যেভাবে মহারাজার দল ব্যাপক ফল করেছে, তার পরে এই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
গত বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরায় টানা পঁচিশ বছরের বাম শাসনের পরিবর্তন হয়। বাম জমানায় ত্রিপুরার উপজাতি স্বশাসিত পরিষদ (ADC) ছিল CPIM-র শাখা উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ নিয়ন্ত্রণে। গত নির্বাচনে সেখানেই IPFT-বিপুল জয়লাভ করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উপজাতি পরিষদের ক্ষমতায় আসে হয় তিপ্রামোথা। দ্রুত জমি হারায় IPFT। পরিস্থিতি এখন এমন যে কার্যত অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে IPFT।