ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ত্রিপুরা। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সেরাজ্যে ফুঁসে উঠেছে বহু নদী। যদিও ধীরে ধীরে কিছু নদীর জল নামছে। সিপাহীজলা জেলার সোনামুড়ায় গোমতী বাদে সব নদীর জল বিপদসীমার নিচে চলে গিয়েছে। এদিকে, গত কয়েকদিনের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির জেরে ত্রিপুরায় মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ ২ জন। ১.২৮ জন মানুষ এখনও ঘর ছাড়া বন্যার জেরে।
advertisement
গোমতী ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। আগরতলার এমবিবি বিমানবন্দরে একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টারে চেপে বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলি পরিদর্শন করতে গোমতী জেলা এবং দক্ষিণ ত্রিপুরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। উদয়পুরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা খিলপাড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খিলপাড়া মার্কেট শেডে থাকা অস্থায়ী ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন। কথা বলেন বিপন্ন বাসিন্দাদের সঙ্গে।
আরও পড়ুনঃ দিঘার এ কী সাংঘাতিক অবস্থা! লং উইকেন্ডে পৌঁছে চমকে গেলেন পর্যটকরা, জানলে আশঙ্কায় সিঁটিয়ে যাবেন আপনিও
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বন্যা কবলিত এলাকার পাশাপাশি ত্রাণ শিবিরগুলি পরিদর্শন করছেন। পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মন্ত্রী এবং বিধায়করা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন। আমরা সম্ভাব্য যা যা করার সবকিছু করছি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার একটানা কাজ করে চলছে। কেন্দ্রীয় সরকারও আমাদের ব্যাপক সহায়তা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বন্যার ত্রাণ এবং উদ্ধার কাজে সহায়তা-সহ আমরা যা যা চেয়েছিলাম তারা আমাদের সবই দিয়েছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার লক্ষ্যে অতিরিক্ত এনডিআরএফ টিম, হেলিকপ্টার এবং বোট মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যা-দুর্গত মানুষের মধ্যে খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যার দরুণ বিপন্ন মানুষের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করছে।” তিনি জানান, বন্যার কারণে অনেক লোক তাদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র হারিয়েছেন। এতে চিন্তার কোনও কারণ নেই। ইতিমধ্যে প্রশাসনের আধিকারিকদের এই বিষয়ে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছি।
পরিদর্শন কালে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন উদয়পুর পুর পরিষদের চেয়ারম্যান শীতল চন্দ্র মজুমদার, গোমতী জেলার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলাশাসক রাভেল হেমেন্দ্র কুমার সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। আকাশপথে উদয়পুর, করবুক, অমরপুর, শান্তিরবাজার, বিলোনীয়া, মাতাবাড়ি, মেলাঘর, চড়িলাম, বিশালগড় ও আগরতলা সহ বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গায় সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের নির্দেশ দেন।
সূত্রের খবএর, প্রায় ৫ হাজার কোটির মতো ক্ষতি হয়েছে ত্রিপুরায় বন্যার জেরে। তবে, সূত্রের খবর, গত কয়েক ঘণ্টায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি খানিকটা উন্নতির দিকে গিয়েছে। উল্লেখ্য, শুধু ১৯ অগাস্ট ২৮৮.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ত্রিপুরার ৮ বন্যা বিধ্বস্ত জেলায়। যা সর্বাধিক বর্ষণ বলে মনে করা হয়। এদিকে, ত্রাণের জন্য ইতিমধ্যে ৪০ কোটি টাকার প্যাকেজ কেন্দ্রের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছে ত্রিপুরাকে।
আবীর ঘোষাল