এজিএমসি ও জিবিপি হাসপাতালের কেএলএস অডিটোরিয়ামে এসোসিয়েশন অফ সার্জন অফ ইন্ডিয়া ত্রিপুরা রাজ্য শাখার ১৮তম বার্ষিক রাজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই ক্ষেত্রটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। স্বাস্থ্য হচ্ছে আমাদের মূল সম্পদ। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা মেনে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উন্নয়নে কাজ করছে ত্রিপুরা সরকারও। এরজন্য পরিকাঠামো ও জনশক্তির প্রয়োজন। এরও ব্যবস্থা করছে সরকার। ডাক্তারদের অধিক নিয়োগ করা হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছেন স্পেশালিস্ট, সুপার স্পেশালিস্ট। যেটা আগে ত্রিপুরায় কল্পনাও করা যেত না। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সার্জারি ক্যাম্প আরো অধিক মাত্রায় অব্যাহত রাখতে হবে। রাজ্যের শেষ প্রান্তের মানুষও যাতে এই সুবিধা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
advertisement
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ৬ বছরে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। যা কোন অংশে অন্যান্য রাজ্যের চাইতে কম নয়। সার্জারি ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি করতে হবে, যেটা মেডিসিনে করা হয়। এজন্য স্বাস্থ্য দফরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ত্রিপুরার চিকিৎসকরা কোন অংশে কম নয়। সব ধরণের অপারেশন এখানে করছেন ডাক্তার বাবুরা। চিকিৎসকদের মেধা ও দায়বদ্ধতাকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আগে কথায় কথায় রোগীদের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু এখন সেই সংখ্যাটা কমেছে। আপনারা সবাই জানেন প্রতি বুধবার এখন ‘মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু’ কার্য্যক্রম করা হয়। যেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আমার কাছে আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রায় ৯০ শতাংশ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসেন মানুষ। সেখানে আমি তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করি।
আরও পড়ুনMaa Flyover Accident: প্রাণঘাতী ঘুড়ির মাঞ্জা, রবিবার সকাল সকাল ফের মা ফ্লাইওভারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে উন্নত মানের হাসপাতাল গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অনেক সংস্থা আমাদের কাছে এসেছে। আগরতলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য জায়গা দেওয়া হবে। তবে শর্ত হিসেবে সরকারি ডাক্তারদের কাজে লাগাতে পারবেন না তারা। এজন্য তাদের নিজেদের ডাক্তার রাখতে হবে। ৮টি সংস্থার পক্ষে এজন্য ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। এধরণের হাসপাতাল গড়ে উঠলে মানুষের আর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। ত্রিপুরায় একটি মেডিক্যাল হাব গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। সেই দিশায় এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার সম্প্রসারনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ত্রিপুরায় এমবিবিএস এর সংখ্যা আগে খুবই কম ছিল। এখন এজিএমসি, টিএমসি ও নতুন একটি মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে প্রায় ৪০০টি আসন হয়েছে। আগে এজিএমসিতে ১০০টি আসন ছিল। এখন প্রায় ১৫০টি হয়েছে। রাজ্যে এখন ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। ৫০টি আসন নিয়ে এই সরকারি ডেন্টাল কলেজ শুরু হয়েছে। এবার এই কলেজে ৬৩টি আসন হয়েছে। ইতিমধ্যে ডায়ালিসিস ইউনিট ও ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডের উদ্বোধন হয়েছে।
ডাঃ সাহা বলেন, আমাদের মেডিক্যাল কলেজে ফ্যাকাল্টি ভাল রয়েছে। সেই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরাও ভাল ফলাফল করছে। আমরা এরআগে কখনও ভাবিনি ত্রিপুরায় কিডনি প্রতিস্থাপন করা যাবে। আর সেটাও করা সম্ভব হয়েছে। এরমধ্যে আরও কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য দীর্ঘ তালিকা জমা হয়েছে। এখন লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। মণিপুরের সিজা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজ্যে একটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলার জন্য যোগাযোগ করেছে। এজন্য জায়গাও দেখা হয়েছে। আরো কিছু প্রক্রিয়া সেরে এবং ক্যাবিনেটে পাশ হওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রায় ৭০০ কোটি টাকা এই খাতে বিনিয়োগ করবে তারা। আইজিএমে বিএসসি নার্সিং কলেজে ৫০টি আসন রয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় ট্রমা সেন্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজিএমসিতে ট্রমা সেন্টার রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ জেলার শান্তিরবাজার, গোমতী জেলা হাসপাতাল ও ধলাই জেলার আমবাসায় ট্রমা কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। উত্তর জেলাতেও ট্রমা সেন্টার খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমবাসায় কার্ডিয়াক কেয়ার সেন্টার খোলা হয়েছে।
এর পাশাপাশি রাজ্যের সব জেলায় নেশামুক্ত কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এধরণের প্রতিটি কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য ২০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এজিএমসিতে ২০টি বিভাগ রয়েছে। যেখানে পিজি কোর্সের জন্য প্রায় ৮৫টি আসন রয়েছে। জিবিতে শয্যার সংখ্যা ৭২৭ থেকে বাড়িয়ে ১,৪১৩টি করা হয়েছে। সম্প্রতি ইমার্জেন্সি মেডিসিন চালু করা হয়েছে। এতে অনেক গুরুতর অসুস্থ রোগী সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। আগামীদিনে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও উন্নতি করা হবে। ডোনার মন্ত্রক থেকে প্রায় ৫১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য রাখা হয়েছে। ডেন্টাল কলেজের জন্য প্রায় ২০২ কোটি টাকা, এজিএমসিতে শিশু ও মা বিভাগের জন্য ১৯২ কোটি টাকা, ১২১ কোটি টাকা বিশ্রামগঞ্জে নেশামুক্ত কেন্দ্রের জন্য দেওয়া হয়েছে।