মুকেশ আম্বানি বলেন, “আমাদের সম্মানিত বন্ধু এবং পরিবার, প্রত্যেককে জানাই নমস্কার এবং শুভ সন্ধ্যা। ভারতীয় ঐতিহ্যে আমরা অভ্যাগতদের অতিথি বলে সম্মান দিয়ে থাকি। ‘অতিথি দেব ভব’-র অর্থ হল, অতিথিরা ঈশ্বরের মতো। আর আমি আপনাদের নমস্কার জানিয়েছি, সেটার অর্থ হল, আমার মধ্যে থাকা ঈশ্বর আপনার মধ্যে থাকা ঈশ্বরকে স্বীকার করে অত্যন্ত আনন্দিত। আপনারা সকলেই এই বিয়ের অনুষ্ঠানকে মঙ্গলময় বানিয়ে তুলেছেন। ধন্যবাদ! একেবারে মন থেকে ধন্যবাদ।”
advertisement
জামনগরে রিলায়েন্স গ্রিনস কমপ্লেক্সে আয়োজিত এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন প্রায় ২০০০ অতিথি। এঁদের মধ্যে রয়েছেন মেটা সিইও মার্ক জুকারবার্গ, মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, বলিউডের সুপারস্টার শাহরুখ খান, দীপিকা পাড়ুকোন, রণবীর সিং, রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট প্রমুখরা। এই উৎসবে যোগ দিতে এসেছেন আমেরিকান গায়ক জে ব্রাউন এবং জনপ্রিয় র্যাপার নিকি মিনাজের মিউজিক্যাল ডিরেক্টর অ্যাডাম ব্ল্যাকস্টোন।
মুকেশ আম্বানি বলেন, “অনন্ত এবং রাধিকা আজীবন সঙ্গী হিসেবে সফর শুরু করতে চলেছে। আর আপনাদের আশীর্বাদ সৌভাগ্যের এক বহুবর্ষজীবী ফসল তৈরি করবে। যার প্রাচুর্য কখনওই হ্রাস পাবে না। আজ আমার বাবা ধীরুভাইও স্বর্গ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ বর্ষণ করছেন। আমি নিশ্চিত যে, তাঁর প্রিয় নাতির জীবনের এই আনন্দের মুহূর্তটি আমরা জামনগরে উদযাপন করছি, এর জন্য তিনি দ্বিগুণ আনন্দিত হয়েছেন।”
জামনগরের প্রসঙ্গ টেনে মুকেশ আম্বানি জানান, জামনগর তাঁর এবং তাঁর বাবার কর্মভূমি। আসলে এটা এমনটা জায়গা, যেখানে তাঁরা তাঁদের লক্ষ্য, আবেগ এবং উদ্যোগ খুঁজে পেয়েছেন। মুকেশ আম্বানির কথায়, “জামনগর এক সময় সম্পূর্ণ অনুর্বর জমি ছিল। আর তিরিশ বছর আগে তো তা মরুভূমিই ছিল। আজ আপনারা যেটা দেখছেন, সেটা আসলে ধীরুভাইয়ের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। রিলায়েন্সের ইতিহাসে জামনগর টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। আর এই জায়গায় আমরা ভবিষ্যতের ব্যবসা এবং আরও জনহিতকর উদ্যোগ চালু করে যাব।”
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুর জনপ্রিয় ক্যাফেতে বিস্ফোরণ, আহত ৯! জঙ্গি যোগের সন্দেহ, তদন্তে এনআইএ
মুকেশ জানান যে, তাঁর পরিবারের একমাত্র লক্ষ্য হল, ভারতের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা এবং গ্রহ আর সেখানে বসবাসকারী সমস্ত মানুষের মঙ্গল করা। তাঁর বক্তব্য, “অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আমি বলতে চাই যে, জামনগর আপনাকে একটি নতুন ভারতের উত্থানের আভাস দেবে। যা প্রাণবন্ত, আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ।”
এরপর কনিষ্ঠ পুত্র তথা হবু বর অনন্তের বিষয়ে মুকেশ আম্বানি বলেন যে, “সংস্কৃতে ওই নামের অর্থ হল, যার কোনও অন্ত নেই, অসীম। আর আমি অনন্তের মধ্যে অসীম সম্ভাবনা দেখতে পাই। আমি অনন্তের মধ্যে অনন্ত শক্তি দেখি। আসলে আমি যখনই অনন্তকে দেখি, আমি ওর মধ্যে আমার বাবা ধীরুভাইকে দেখতে পাই…তাঁদের কাজ এবং কোনও কিছুই অসম্ভব নয়, এই মনোভাব একেবারে একই রকম।” পরিবারের হবু বউ রাধিকার প্রসঙ্গে মুকেশের বক্তব্য, রাধিকার মধ্যেই অনন্ত নিজের আদর্শ জীবনসঙ্গীকে খুঁজে পেয়েছে। রাধিকার প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, “গভীর সৃজনশীল ক্ষমতার আধার রাধিকা। প্রেম-ভালবাসার যেন এক উচ্ছল ধারা। বেশ যথোপযুক্ত ভাবে, রাধিকার মধ্যে ভগবান কৃষ্ণের প্রিয় সঙ্গীর নাম রয়েছে। রাধিকা এবং অনন্ত, অনন্ত এবং রাধিকা…এটা তো ঈশ্বরের তৈরি জুটি।”
অনন্ত-রাধিকার উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের থিম ছিল ‘অ্যান ইভনিং ইন এভারল্যান্ড’। যেখানে অতিথিরা নির্ধারিত ড্রেস কোড মেনে নিজেদের সাজিয়ে নিয়েছিলেন অভিজাত রুচিসম্মত পোশাকে। বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়েছিল ওই সমারোহের প্রথম সন্ধ্যার অনুষ্ঠান।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের প্রিয় অতিথি এবং বন্ধুরা, মনে রাখবেন যে, তিন দিন ব্যাপী দুর্দান্ত এবং অবিস্মরণীয় অনুষ্ঠান আপনাদের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। আর প্রতিটির অনুষ্ঠানই নীতার মস্তিষ্কপ্রসূত। বিগত কয়েক মাস ধরে রীতিমতো একা হাতে অক্লান্ত ভাবে সমস্ত কিছু সামলেছেন। প্রতিটি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর, নান্দনিকতার উপর জোর দেওয়া এবং নিখুঁত কাজের প্রতি ভালবাসা – এই সব কিছুই রয়েছে। এমনকী জীবনসঙ্গী হিসেবে থাকার চার দশক পরেও আমি জানি না যে, তাঁর এই অসীম এনার্জি কোথা থেকে আসে। যদিও আমি আন্দাজ করতে পারি যে, মা অম্বার প্রতি ভক্তি এবং নিজের সন্তানদের প্রতি তাঁর অসীম ভালবাসা থেকেই এটা আসে। তাই এই উৎসবে নাচ-গান করে অনুষ্ঠানে নিজেদের মজিয়ে নেওয়ার জন্য আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।”