বিজেপি বিধায়ক মাইকেল লোবো ঘটনাকে “অত্যন্ত মর্মান্তিক” বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, মৃতদের মধ্যে তিন জন মহিলা এবং ২০ জন পুরুষ রয়েছেন—কিছু পর্যটক এবং বাকিরা মূলত বেসমেন্টে কাজ করা স্থানীয় কর্মী। তিনি জানিয়েছেন, বেশির ভাগ মানুষই দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন, কারণ আতঙ্কে অনেকেই বেসমেন্টের দিকে দৌড়েছিলেন।
গোয়া পুলিশ জানিয়েছে, রাত প্রায় ১টার সময় ক্লাবের রান্নাঘর সংলগ্ন এলাকায় একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো কাঠামোয় ছড়িয়ে পড়ে এবং কর্মীদের পালানোর সময় প্রায় ছিল না। ঘটনাস্থল থেকে সাত জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, তাঁদের মধ্যে এক জনের ৬০ শতাংশেরও বেশি দগ্ধ হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দু’জন সরাসরি দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হলেও বাকিরা ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে “তিন থেকে চার জন পর্যটক” রয়েছেন এবং অধিকাংশই ক্লাবের রান্নাঘরের কর্মী।
মাঝরাতে আনন্দ উদযাপন বদলে গেল বিভীষিকায়! সিলিন্ডার ফেটে ২৫ জনের মৃত্যু গোয়ার নাইটক্লাবে
দমকলবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্লাবের ঘনবদ্ধ অভ্যন্তরীণ অংশে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বহু কর্মীকে সময়মতো উদ্ধার করা যায়নি। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, বন্ধের প্রস্তুতির সময় রান্নাঘরে গ্যাস লিক থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে। ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির দল ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে এবং জেলা প্রশাসন গোটা ঘটনাপ্রবাহের ওপর পৃথক তদন্ত শুরু করেছে।
অগ্নিকাণ্ডের পর নাইটক্লাবটি সিল করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মালিক এবং ম্যানেজমেন্টকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে—গ্যাস সংযোগ, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বিধি ঠিকভাবে মানা হয়েছিল কি না। ডিজিপি জানিয়েছেন, ক্লাবের সমস্ত নিরাপত্তা পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হবে।
মৃতদের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। আহতদের পরিচয় ও অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ধ্বংসস্তূপের নিচে কেউ আটকে রয়েছেন কি না, উদ্ধারকারী দল তা নিশ্চিত করতে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনাটিকে “অত্যন্ত বেদনাদায়ক” বলে উল্লেখ করে মৃতদের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা সাহায্যের ঘোষণা করেছেন। রাষ্ট্রপতি শোকবার্তায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী সাওয়ন্ত এই দিনটিকে “গোয়ার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক” বলে উল্লেখ করে জানিয়েছেন যে নিরাপত্তা শৈথিল্যের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় বিধায়ক মাইকেল লোবো জানান, এলাকার সমস্ত ক্লাব ও রেস্তোরাঁয় জরুরি ভিত্তিতে অগ্নিনিরাপত্তা অডিট হবে। বৈধ অগ্নিনিরাপত্তা অনুমতি দেখাতে না পারলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
