শিক্ষা দুর্নীতির মতো এত বড় ইস্যু হাতে পেয়েও, সরকারকে হেলিয়ে দেওয়ার মতো আন্দোলন করতে পারছে না বিজেপি। কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে সেই পুরনো তত্ব। দলের একটা বড় অংশের নেতা,কর্মীর নিষ্ক্রিয় মনোভাব এবং দল পরিচালনায় সমন্বয়ের অভাব।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শিক্ষা দূর্নীতি ইস্যুতে আন্দোলন যে সন্তোষজনক হচ্ছে না, সম্প্রতি রাজ্য নেতৃত্বকে সেই বার্তা দিয়েছিল কেন্দ্র। গত ৩১ জুলাই রাত ৮ টায় দলের জেলা সভাপতি ও মোর্চা নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক সংগঠন অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, জেলায় জেলায় এই দূ্র্নীতি ইস্যুতে বিক্ষোভ কর্মসূচিকে আরও জোরদার করতে রাজ্যের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও ডাকতে হবে। ওই বৈঠকে ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও।
advertisement
ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেওয়া এক পদাধিকারীর মতে,রাজ্যের ১৬ জন সাংসদ ও ভারতী ঘোষ, অনুপম হাজরা, মাফুজা খাতুনের মতো নেতাদের মধ্যে রাজ্যজুড়ে সার্বিক পরিচিতি ও জনভিত্তি রয়ছে একমাত্র দিলীপ ঘোষের। অথচ, সেই দিলীপ ঘোষকেই এই ইস্যুতে কলকাতায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে দেখা গেল না। ছিলেন না শুভেন্দু অধিকারীও। ফলে, স্বাভাবিক ভাবে দলের কর্মী সমর্থকদের কাছে এটা খুবই অস্বাভাবিক মনে হয়েছে।
আরও পড়ুন: 'মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্যপূরণ হবে না', নতুন জেলা ঘোষণার দিনই মমতাকে চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর
দলের একাংশের মতে, কেন্দ্রীয় এই মিছিলে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনুপস্থিতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজর এড়ায়নি। ফলে, দলের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে ফের সতর্ক করে কেন্দ্র। দলের প্রয়োজনে সবাইকে কাজে লাগানোর নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। তার জেরেই ভার্চুয়াল বৈঠকে রাজ্যে দলের সংগঠনের শীর্ষ নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীকে এই নির্দেশ দিতে হল বলে মনে করছে দলের একাংশ।
এদিকে, সূত্রের খবর, গতকাল দিল্লিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠকে সেই পরামর্শই দিয়েছেন অমিত শাহ। আর, এর পরেই দিল্লিতে দিলীপ ঘোষের বাসভবনে গিয়ে দিলীপকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন শুভেন্দু। যদিও, দিলীপ বলেছেন, শুভেন্দু সংসদে এসেছেন শুনে তিনি নিজেই তাঁকে বাসভবনে আসতে ফোন করেছিলেন।
আরও পড়ুন: জুতো কাণ্ডের পর বাড়ছে নিরাপত্তা, আদালতে তুলে পার্থ- অর্পিতাকে ফের নিজেদের হেফাজতে চাইবে ইডি
এই প্রসঙ্গে দিলীপকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'দুই রাজনীতির লোক একজায়গায় থাকলে রাজনীতির কথাই তো হবে। রাজ্য রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি ও দলের আন্দোলন নিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি সেভাবে এই আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে সেভাবে যুক্ত ছিলাম না। এর মধ্যে একবার রাজ্যে গেলেও, আমার সংসদীয় এলাকায় যেতে হয়েছিল। সংসদের অধিবেশন শেষ হলেই আমরা রাজ্যে গিয়ে সবাই একসঙ্গে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলব।'
পর্যবেক্ষক মহলের ব্যাখ্যা, দিলীপের এই মন্তব্যে রাজ্যে আন্দোলন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উদ্বেগ ও পরামর্শের ছায়াই দেখা যাচ্ছে।
অমিত শাহ, নাড্ডার নির্দেশ শিরোধার্য করে দিলীপ, সুকান্ত, শুভেন্দুরা রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, পার্থ ও দূর্নীতি ইস্যুতে ''ব্যকফুটে " থাকা তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে কতটা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন, সেটাই এখন দেখার। কারণ, তৃণমূল তো বটেই, বিরোধী বাম, কংগ্রেসও মনে করে, তৃণমূলের বিজেপির বিরুদ্ধে কিম্বা বিজেপি-র তৃণমূলের বিরুদ্ধে " কার্যকরী আন্দোলন " করা সম্ভব নয়।