নয়াদিল্লি: কোনও বিলে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা যাবে না। জানিয়ে দিল সর্বোচ্চ আদালতের সংবিধান বেঞ্চ। রাষ্ট্রপতির তরফে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে একটি চিঠি লিখে বিলে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের জবাব চাওয়া হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশে গঠিত হয় সংবিধান বেঞ্চ। দীর্ঘ শুনানির পরে এবার নিজের মতামত জানাল সুপ্রিম কোর্ট। জানাল, রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপালকে বিল সই করার বিষয়ে সময় বেঁধে দেওয়া উচিত নয়৷
advertisement
বেঞ্চের মতে, যদি কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল বিল দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখেন, তা অবশ্যই বিধানসভায় ফের পাঠানো উচিত৷ ‘প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স’ মামলায় বৃহস্পতিবার এমনই কথা জানাল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ৷ এই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি এএস চন্দরকর৷
রাজ্য বিধানসভায় কোনও বিল পাশ হওয়ার পরে ঠিক কী পদ্ধতিতে তা রাজ্যপাল হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে এবং অনুমোদিত হয়ে আইন হবে, তা বিশদে ব্যাখ্যা করেছে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ৷ শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সংবিধান বলছে নতুন বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের কাছে তিনটি বিকল্প থাকছে৷ প্রথম, বিলটিতে সই করা, দ্বিতীয় সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো এবং তৃতীয় সম্মতি না দিয়ে বিলটি বিধানসভায় ফেরত পাঠানো৷
পাশাপাশি, বেঞ্চ জানিয়েছে, এর মধ্যে কোন বিকল্প রাজ্যপালের ঠিক মনে হচ্ছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তও তিনিই নেবেন৷ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সংবিধানের ২০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাজ্যপালের নিজস্ব বিচক্ষণতা রয়েছে৷ তিনি বিলটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর জন্য মন্ত্রিসভার কাউন্সিলের পরামর্শ শোনার বিষয়ে বাধ্য নন৷
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি তাঁদের কাজ কী ভাবে করবেন, তা আদালতে বিচারযোগ্য নয়৷ কিন্তু, বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে যদি বিনা কারণে, বিনা যুক্তিতে কোনও বিল রাজ্যপালের কাছে পড়ে থাকে, তাহলে সেই বিষয়ে আদালত তাঁকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ জারি করতে পারে৷
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে শীর্ষ আদালত জানায়, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের কাজের উপর সাধারণ ভাবে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপ করা যায় না। তবে দীর্ঘ দিন ধরে নিষ্ক্রিয়তা থাকলে সাংবিধানিক আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে জানিয়েছে সাংবিধানিক বেঞ্চ। সেক্ষেত্রে, সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদ এক্ষেত্রে আদালতের ক্ষমতাকে আড়াল করতে পারবে না৷
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৩ তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কোনও বিল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে রাষ্ট্রপতিকে প্রতি বার শীর্ষ আদালতের মতামত চাইতেই হবে— এমন বাধ্যবাধকতা নেই। একই সঙ্গে আদালত স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, বিল আইনে পরিণত না হলে, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে সম্মতি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে বৃহস্পতিবার বেঞ্চ জানিয়েছে, এমন ভাবে বিল সই করার বিষয়ে টাইমলাইন বেঁধে দেওয়া রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হরণ করার শামিল৷
