নয়াদিল্লি: এসআইআর ইস্যুতে সরগরম সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচন কমিশনের তালিকায় ‘মৃত’দের একাংশ হাজির হয়েছেন দিল্লিতেও। বিহারে একই ঠিকানায় ২৪০ জন ভোটার! বুধবার সুপ্রিম কোর্টের সামনে এই তথ্য তুলে ধরায় বিস্ময় প্রকাশ করলেন বিচারপতি সূর্য কান্ত। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীকে পাশে রেখে শুনানির পর্যবেক্ষণে তাঁর মন্তব্য, ‘একটা বাড়িতে এত লোক থাকতেই পারে না। অসম্ভব। যদি না বিরাট বাড়ি হয়।’
advertisement
এদিকে, এসআইআর নিয়ে বড়সড় নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট! প্রামাণ্য নথি হিসেবে গণ্য করা হবে আধার কার্ড! বিহারে SIR-এ যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে তাঁদের নাম ওয়েবসাইটে দিতে হবে। কেন নাম বাদ গিয়েছে? তার কারণও উল্লেখ করতে হবে। বিহারের এসআইআর মামলায় জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে এমনই নির্দেশ শীর্ষ আদালতের।
পাশাপাশি, নাম বাদ গেলেও পুনর্বিবেচনার জন্য যখন আবেদন করা হবে তখন আধার কার্ডও জমা করতে পারবেন ভুক্তভোগীরা। জানা গিয়েছে, কমিশনকে এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি বের করার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের!
বিচারপতির মুখে এই মন্তব্য শুনেই নিজেদের পক্ষে সওয়াল মজবুত করার শক্তি পেয়ে গেল আবেদনকারীরা। এরপরই গোটা দেশে শুরু হতে যাওয়া এসআইআরে স্থগিতাদেশের দাবি জানানো হল। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস, মহুয়া মৈত্র, ডেরেক ও’ব্রায়েন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সহ একগুচ্ছ আবেদনকারী স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর)র বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তারই শুনানি চলছে। বৃহস্পতিবারও তার শুনানি হয়।
বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী গোপালশঙ্কর নারায়ণ, পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে এসআইআরে স্থগিতাদেশ দাবি করলেন। বললেন, রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই কমিশন কী করে বলতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর শুরু করতে তৈরি? গত ২৪ জুন নির্বাচন কমিশন তার নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, বিহারের পর এবার গোটা দেশে এসআইআর হবে। সময় পরে বলা হবে। বৃহস্পতিবার বারবার উঠে এল পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ।
আইজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনই বাংলায় শুরু হয়ে গিয়েছে। নাম বাদ যাওয়ায় তিন মহিলা মঙ্গলবার হাইকোর্টের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলেন। ফলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে এগোচ্ছে। যদিও বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, পশ্চিমবঙ্গের কথা পরে শুনব। এখন বিহার।
লোকসভা ভোটের সময়ও বিহারে ভোটার সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ। কিন্তু এখন এসআইআর করতে গিয়ে বাদ পড়েছে ৬৫ লক্ষের নাম। যার মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত। ৩৮ লক্ষ চলে গিয়েছে অন্যত্র অথবা বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। ৭ লক্ষের নাম একাধিক জায়গায়। মজার বিষয় হল, কমিশনের তালিকায় ‘মৃত’ ব্যক্তিদের একাংশকে হাজির করানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। যদিও এদিন শুনানিতে আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, এসআইআরে আপত্তি নেই। কিন্তু তার জন্য এত তাড়াহুড়ো কেন? শিয়রে ভোট। আর তখন কেন এই শুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া? সময় নিয়ে হোক। সিংভির সওয়াল, আধার, ভোটার কার্ড গ্রাহ্য করছে না কমিশন। পাসপোর্ট সহ যে ১১টি নথি প্রামাণ্য হিসেবে কমিশন চেয়েছে, তার অধিকাংশই বিহারের বাসিন্দাদের কাছে নেই। আবেদনকারীর অন্য আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের সওয়াল, ১০-১২ শতাংশ বাসিন্দার নাম ‘নন রেকমেন্ডেড’ বলে বাতিল করা হয়েছে কেন? কমিশন ওয়েবসাইটে কেন দিচ্ছে না বাতিল ৬৫ লক্ষ লোকের ডিজিটাল রেকর্ড? তবে কি কোনও অসৎ উদ্দেশ্য আছে? আজ এই অভিযোগের জবাব দিতে হবে কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদীকে।