বেঙ্গালুরুর এক মহিলা, নমিতা, যিনি বাবার ‘অস্থি বিসর্জন’-এর উদ্দেশ্যে হরিদ্বার যাওয়ার পথে কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে পড়েছেন, ANI-কে জানান, “আমার সঙ্গে বাবার অস্থি আছে। আমাকে বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি, তার পর দিল্লি থেকে দেরাদুন হয়ে হরিদ্বার পৌঁছতে হবে। আগামিকালই অস্থি বিসর্জন করতে হবে। কোনও আগাম বার্তা ছাড়াই ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছে। এখন বলছে আজ কোনও ফ্লাইট নেই। অন্য এয়ারলাইন্সে টিকিট কাটতে হবে।”
advertisement
হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল ও দীর্ঘ দেরির পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালালেও যাত্রীরা তথ্যের অভাব, চাপ, শিডিউল পাল্টানোর জটিলতা, রিফান্ডের দুশ্চিন্তা ও অপ্রতিক্রিয়াশীল কর্মীদের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন।
লক্ষণ দেখেও ফেলে রাখার ফল! ফুসফুসের ক্যানসার কখন ধরা পড়লে সারে? জানাচ্ছেন চিকিৎসক
আরজি কর দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট দিল সিবিআই! অভিযুক্ত হিসেবে নাম খোদ অভিযোগকারী আখতারি আলির
অন্য সংস্থার টিকিটের অত্যধিক মূল্য, ভ্রমণ পরিকল্পনা ভেঙে যাওয়া এবং রিফান্ড—এই সব উদ্বেগের মধ্যে তিনি শোকও সামলাচ্ছেন। তিনি বলেন, “অন্যান্য ফ্লাইটের টিকিট প্রতি জন ৬০ হাজার টাকা। আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়… আমরা হরিদ্বার পৌঁছতে পারছি না। সমস্ত টাকা নষ্ট হল। রিফান্ডও আংশিক দেবে, তাও পেতে এক সপ্তাহ লাগবে। কত কাটা হবে জানি না। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি আমাকে হরিদ্বার পৌঁছনোর ব্যবস্থা করতে, কারণ আমার বাবার অস্থি বিসর্জন অত্যন্ত জরুরি।”
তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দরে একদল তরুণ এবং রায়পুরগামী এক পরিবার কাজের জায়গায় সময়মতো ফিরতে পারবেন কি না, সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
গোয়া বিমানবন্দরে এক মহিলা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি যে ফ্লাইট বাতিল হয়েছে… ভোর ৫টা থেকে জেগে আছি, দু’ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। কোনও তথ্য নেই। লাইনেই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এখন বলছে স্টে-ও দেবে না। আগামীকাল ফ্লাইট দেবে, আমাদের একটা বিয়েতে যেতে হবে। পুরো বিষয়টাই বিশৃঙ্খল… ইন্ডিগোকে নিয়ে আমরা খুব হতাশ।”
আরেকজন জানান, “আমাদের বলা হয়েছে রায়পুর ফ্লাইট বাতিল। তারা বলছে বদলে আমরা আগামীকালের ফ্লাইট নিতে পারি, কিন্তু সেই ফ্লাইট আদৌ ছাড়বে কি না, তারও নিশ্চয়তা নেই। আমাদের এক দিন এখানে থাকতে হবে। তারা বলছে কাস্টমার কেয়ারের সঙ্গে কথা বলতে…”
গুজরাতে আলি হায়দার জানান, দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ভ্রমণ শেষে তাঁদের দুরবস্থা আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, “গতকাল আমাদের ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল, তাই জেদ্দায় এক দিন অতিরিক্ত থাকতে হয়েছে। এখন এখানে এসে আমাদের ঢুকতেই দিচ্ছে না… শুনছি আমাদের কানেক্টিং ফ্লাইটও দেরিতে ছাড়বে। খাবার বা থাকার বিষয়ে কোনও তথ্য নেই… আমাদের শেষ গন্তব্য শিলচর। ইন্ডিগোর কর্মীরা কোনও সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। আমরা এখন কী করব?” তিনি আরও বলেন যে ২৫ জনের দলের মধ্যে বৃদ্ধ, মহিলা ও শিশু রয়েছে, এবং তাঁরা প্রাথমিক সুবিধাও পাচ্ছেন না—টয়লেট, হুইলচেয়ার, খাবার কিছুই যথেষ্ট নয়।
ইন্ডিগো বিশৃঙ্খলার কারণ কী?
টানা চার দিন ধরে ইন্ডিগোর কার্যক্রম ব্যাপক বিপর্যস্ত—শুক্রবার এক দিনে ৭০০ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, যা সংস্থার ২০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, পুনে ও চেন্নাইয়ের মতো প্রধান কেন্দ্রগুলিতে দীর্ঘ লাইন, হারানো লাগেজ, সীমিত সহায়তা ও গভীর বিভ্রান্তির অভিযোগ উঠছে।
ইন্ডিগো স্বীকার করেছে যে নতুন ডিউটি-নর্মস অনুযায়ী ক্রু-সংক্রান্ত প্রয়োজন ভুলভাবে বিচার করায় কর্মীসংকট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে শীতকালীন আবহাওয়া ও বিমানবন্দর ভিড় পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। সংশোধনের পরও সংস্থা জানিয়েছে—আগামী দু’তিন দিন আরও ফ্লাইট বাতিল হতে পারে, সময়সূচি স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে।
ইন্ডিগোর CEO পিটার এলবার্স কর্মীদের বলেছেন, স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধার করা ও সংস্থার ‘পাংচুয়ালিটি’-র খ্যাতি ফিরিয়ে আনা সহজ কাজ হবে না।
শুক্রবার DGCA একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রু-ডিউটি নিয়ম শিথিল করেছে, যাতে চলমান সংকট কিছুটা সামাল দেওয়া যায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা আপাতত সেই নিয়ম প্রত্যাহার করেছে, যা অনুযায়ী সাপ্তাহিক বিশ্রামের পরিবর্তে জমাকৃত ছুটি ব্যবহার করা যেত না। নতুন নিয়মের ফলে ক্রু-রোস্টারিং আরও জটিল হয়ে উঠেছিল।
ইন্ডিগো জানিয়েছে, সম্পূর্ণ নতুন FDTL নর্মস পুরোপুরি কার্যকর হতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগবে। এর মধ্যে আংশিক শিথিলতা চেয়ে সংস্থা আবেদন করেছে যাতে পরিষেবা দ্রুত স্থিতিশীল করা যায়। বিশৃঙ্খলার মধ্যেই বৃহস্পতিবার ইন্ডিগো যাত্রী ও শিল্পের সহকর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে জানায়, “MOCA, DGCA, BCAS, AAI এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমাদের দল দেরির প্রভাব কমাতে এবং কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে নিরলস পরিশ্রম করছে। যাত্রীদের যেকোনও পরিবর্তনের বিষয়ে আপডেট রাখা হচ্ছে। বিমানবন্দরে রওনা হওয়ার আগে ফ্লাইট স্ট্যাটাস অবশ্যই দেখে নিতে অনুরোধ করছি।”
