পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণায় স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের শুভেন্দু অধিকারীর করা মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আর কোন বাধা রইল না বলেই মনে করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে পয়লা বৈশাখের পর যে কোনও দিন রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষের মনে আছে 'হাজার দুয়ারিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী'! বিস্ফোরক অভিযোগ বিজেপি নেতার
advertisement
পঞ্চায়েতে ওবিসি আসন সংরক্ষণে গরমিলের অভিযোগ করে হাইকোর্টে কোর্টে মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সংরক্ষণের প্রশ্নে শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ উড়িয়ে না দিলেও নির্বাচনের দিন ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনও স্থগিতাদেশ দিতে চায়নি হাইকোর্ট। এর পর, হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন অধিকারী। কিন্তু গতকাল সুপ্রিম কোর্টেও হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকেই কার্যত বহাল রাখে। ওয়াকিবহাল মহলের মতেষ সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পঞ্চায়েতের দিন ঘোষণা নিয়ে কমিশনের আর কোনও বাধা রইলো না।
সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও শেষ রক্ষা হল না। রাজ্যের আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের দিন স্থগিত রাখতে প্রথমে হাইকোর্ট পরে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু গতকাল সুপ্রিম কোর্টে দুপক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ভোটের দিন ঘোষনা আটকাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা গুরুতর বিষয়। তা করা সম্ভব নয়।
সুপ্রিম কোর্টের আগে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আসন সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে শুভেন্দু প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। তপশিলি জাতি, আদিবাসী এবং ওবিসিদের আসন সংরক্ষণে আলাদা আলাদা মাপকাঠি করা নিয়ে রাজ্য সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সংরক্ষণের প্রশ্ন, শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগকে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট খারিজ না করলেও, তার জেরে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে চাইনি কোনো আদালত।
আরও পড়ুন: নজরে পঞ্চায়েত ভোট, আগামিকাল থেকেই জেলা সফরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
গতকাল সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর শুভেন্দু বলেন, "হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকেই মান্যতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট তবে, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর দাবিতে আবার আদালতে যাব।"
গতকাল সুপ্রিম কোর্টে শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবিদের মূল বক্তব্য ছিল, সংরক্ষণের প্রশ্ন বিরোধী দলনেতার অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য জানতে চাওয়া হোক। এই প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করে নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবীর এই প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীরাও বলেন, তারা এই প্রশ্নের জবাব দিতে প্রস্তুত।
দু' তরফের আইনজীবীদের এই সওয়াল জবাবের মধ্যে প্রধান বিচারপতি নিজেই বলেন, ''মে মাসে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। আমরা কীভাবে ভোট আটকাতে নির্দেশ দিতে পারি? নির্বাচনে বাধা দেওয়া অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। সুপ্রিম কোর্ট তা করতে পারে না এ বিষয়ে তাঁরা কোনও হস্তক্ষেপ করবেন না।" ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই নির্দেশের পরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে স্থগিতাদেশ চেয়ে শুভেন্দু অধিকারীর দাবি কার্যত খারিজ হয়ে যায়।
হিসাব মতো রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা মে মাসের মধ্যে। যদিও, বিগত পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নে মামলার মীমাংসা হতে দেরি হওয়ার জন্য নির্বাচনে বিলম্ব হয়। সে কারণে বর্তমান পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হবে কার্যত অগাস্টে। এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই গতকাল শুভেন্দুর আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে বলেন, বর্তমান পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হবে জুলাইয়ে। কিন্তু, শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হবার পর রাজ্যের ভোট করানোর সিদ্ধান্তকেই সঙ্গত বলে মনে করেন। ফলে, শুভেন্দুর আইনজীবীদের ভোট পিছনোর শেষ চেষ্টাও মাঠে মারা যায়।
রাজনৈতিক মহলের মতে, ২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে কোনও নির্বাচনই চায় না বিজেপি। রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক পরিস্থিতি যা তাতে, পঞ্চায়েত নির্বাচন হলে দলের কঙ্কালসার চেহারা আবার সামনে এসে পড়বে। লোকসভা ভোটের আগে, তাতে দলের নিচু তলায় বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে মনে করছেন সুকান্ত, শুভেন্দুরা। সে কারণেই নানা অছিলায় পঞ্চায়েত ভোট পিছতে আদালতে মামলা করেছিলেন শুভেন্দু। এখন,ভোট পিছনোর কৌশলে সফল না হতে পেরে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে ফের আদালতে গিয়ে জট পাকাতে চাইছেন শুভেন্দু ও তাঁর দল বিজেপি।