তবে গোড়া থেকেই বলা যাক! ৪৬ বছর পর কুশীনগর জেলার খড্ডা ব্লকের শতিশ্বা গোপাল গ্রামে ফিরে এলেন তায়াব আনসারি। সেই ১৯৭৯ সালে পারিবারিক অশান্তির জেরে বাড়ি-ছাড়া হয়েছিলেন তায়াব। বাবা রিয়াসত আনসারি আর ছোট ভাই সাইদের উপর রাগ করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এর পর কালের নিয়মে জমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে! বাবা রিয়াসাত মারা গিয়েছেন, সেই ছোট্ট ভাইটা বিয়ে করেছে, তায়াব নিজেও আজ সংসারি। বিহারের বাসিন্দা মেহরুনকে বিয়ে করে শ্যামলিতে থাকেন, তাঁদের ছেলে আফতাব, মেয়ে সানিয়া। এতগুলো বছরে তায়াব কখনও থেকেছেন পঞ্জাবে, কখনও রাজস্থানে, কখনও বা গুজরাতে। কিন্তু এত পরিবর্তনের মধ্যেও, একটা বিষয় অপরিবর্তিতই থেকেছে। কোনও কিছুর জন্যই দীর্ঘ ৪৬ বছরে একটা বারের জন্যও বাড়ি ফেরেননি তায়াব। অবশেষে সেই অসম্ভবও সম্ভব হল! বাড়ি ফিরলেন তায়াব। ফেরাল SIR।
advertisement
তায়াবের বাড়ির লোকেরা ধরেই নিয়েছিলেন, তায়াব আর বেঁচে নেই। খোঁজ-তল্লাশিও বন্ধ হয়েছিল ! অন্যদিকে তায়াব নানা সময়ে, ভারতের নানা প্রান্তে ঠিকানা গাঁড়লেও, কুশীনগরের সেই গ্রাম, সেই ভিটেবাড়ি, কোনওকিছুকেই মন থেকে ভুলতে পারেননি। একটা দিনও কাটত না, যখন তায়াব বাড়ির কথা ভাবেননি, তার গ্রামের কথা ভাবেননি। কিন্তু যে কাছের লোকদের উপর রাগ করে, জেদের বশে বাড়ি ছেড়েছিলেন, সেই বাড়িতে আর ফিরতে পারেননি। অবশেষে পারলেন। বাড়ি ফিরলেন তায়াব। ফেরাল SIR।
ঠিক কী ঘটেছিল? জানা যায়, SIR ফর্ম পূরণ করতে গিয়েই সমস্যায় পড়েন তায়াব। ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর বাবার কোনও নথি ছিল না। প্রতিবেশীরা তাঁকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। SIR–এর মাধ্যমে বর্তমান ভোটার তালিকার সঙ্গে রেকর্ড মিলিয়ে নিতে হলে তাঁকে গ্রামে ফিরতেই হত। কাজেই,
৪৬ বছর পর আবার গ্রামে ফিরলেন তায়াব আনসারি। গ্রামে পা দিয়েই চমকে ওঠেন। এই কি তাঁর সেই ফেলে যাওয়া গ্রাম? এখন ভোলবদল করে ঝা-চকচকে। কাঁচা ঘরের জায়গায় পাকা বাড়ি। গ্রামবাসীদের কাছে নিজের ভাইয়ের কথা বলেন। তাঁরাই তায়াবকে সাইদের বাড়ির ঠিকানা জানান। সাইদ তো তায়াবকে প্রথম দেখে বিশ্বাসই করেননি, দাদা এসেছে। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন, দাদা বেঁচে নেই। কিন্তু তায়াব যখন পুরনো সব কথা বলেন, তখন সাইদ বোঝেন, দাদা এসেছে। দৌড়ে গিয়ে দাদাকে বুকে আঁকড়ে ধরল ছোট ভাই। কান্নায় ভেঙে পড়লেন দু’জনেই। দীর্ঘ ৪৬ বছর পর বাড়ির ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিল SIR।
ভারত সরকারের SIR উদ্যোগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তায়াব বলেন, ” SIR প্রক্রিয়ার কারণেই আমি আবার আমার গ্রাম, আমার পরিবারকে খুঁজে পেলাম। যদিও এটা এক ধরনের অজুহাতই ছিল! কিন্তু SIR ফর্ম পূরণের জন্য আমায় তো বাড়ি ফিরতেই হত… এতবছরে যা কোনওকিছু করতে পারেনি, SIR তাই করে দেখাল।”
