কিন্তু, আতঙ্কের বোধহয় এখানেই শেষ নয়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যোশীমঠের মাটি যেভাবে বসে যেতে শুরু করেছে, ঠিক তেমনটাই ভবিষ্যতে হতে পারে উত্তরকাশী কিংবা নৈনিতালেও।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্রে সবসময় পর্যটকদের চাপ থাকে। কারণ, ওই এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই তাঁদের রুজিরুটি। পর্যটকদের চাপ বাড়লে একই সঙ্গে বাড়তে থাকে ইমারত, রাস্তা, সুড়ঙ্গ, পথঘাট। বেআইনি ভাবে তৈরি হয় কত না বাড়ি, হোটেল।
advertisement
মানুষের এই প্রবল চাপ তো বটেই, এছাড়াও, পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র বহু সময়েই প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখেও পড়ে। যেমন, হঠাৎ মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান, ধস। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই সবই শহরগুলির ভূমিস্তরে বড়সড় রদবদল ঘটিয়ে দেয়।
কোনও ভাবে জল ঢুকে পড়ে কিংবা প্রবল কম্পনে হঠাৎ করেই সরতে শুরু মাটির স্তর। বসে যেতে শুরু করে গোটা এলাকা। মাটি বসে যাওয়ায় (land subsidence) বাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তা, সর্বত্রই দেখা দিতে শুরু করে ফাটল। দিনে দিনে ফাটল আরও চওড়া হতে থাকে। বাড়তে থাকে ফাটলের সংখ্যা।
নৈনিতালের ভূ-প্রকৃতি পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞেরা শোনাচ্ছেন আতঙ্কের কথা। তাঁর দাবি, ২০০৯ এবং ২০১৬ সালের ভূমিধসের ঘটনা বিচার করে দেখা গিয়েছে, নৈনিতাল শহরের ৫০ শতাংশ এলাকাই ভূমিধসের উপরে গড়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট বলছেন, "যোশীমঠে আজ যা দেখা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়িই আমরা তেমন কোনও দৃশ্য নৈনিতাল, উত্তরকাশী কিংবা চম্পাওয়াতের মতো শহরে দেখতে পারি। এই সমস্ত শহরও অনেকাংশে ধসের মতো নরম মাটির উপরে তৈরি। ফলে সামান্য কম্পনেই এখানে ধস বা মাটি বসে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।"
যোশীমঠের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের বর্তমান অবস্থার জন্য শহরেরই থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে চলা NTPC-র তপোবন-বিষ্ণুগড় হাইডেল প্রকল্প অনেকাংশেই দায়ী। তপোবন-বিষ্ণুগড় রাস্তা তৈরির জন্য পাহাড়ের মধ্যে ঘটানো হচ্ছিল বড় বড় বিস্ফোরণ, টানেল বোরারের কাজ চলছিল পুরোদমে। এলাকাবাসীর দাবি, নাগাড়ে ওই ধরনের কম্পন চলার পর থেকেই যোশীমঠের মাটি বসে যেতে শুরু করে। ফাটল দেখা দেয় বাড়িতে, রাস্তায়। এছাড়া,যোশীমঠের খারাপ নিকাশি ব্যবস্থাও মাটির স্তরে রদবদল করার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা।
গত কয়েক বছরে উত্তরাখণ্ডের একের পর এক বিপর্যয়ই সম্ভবত ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেখানকার প্রকৃতির উপরে একটু বেশিই চাপ দিয়ে ফেলছে মানুষ। এই দফায় নিজেদের না আটকালে, ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা।