আগরতলায় প্রতিমা ভৌমিকের কার্যালয়ে গেলে দেখা যাবে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসুলভ কোনও চাকচিক্যই নেই সেখানে। নির্বাচনে জেতার পরে এসেছে বহু শুভেচ্ছোবার্তা, ফুল-মিষ্ট। সে সব তো আছেই। তবে সবচেয়ে বেশি যা চোখে পড়ে, তা হল সাদামাটা একটা জীবনযাপন। পরনে একটা সাধারণ সুতির শাড়ি। আঁচলটা খানিকটা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ঢঙেই কাঁধ জুড়ে জড়ানো। আর আরও একটি বিষয়েও প্রতিমার সঙ্গে মিল রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর। তা হল হাওয়াই চপ্পল।
advertisement
সাদা বা ঘিয়ে জমির সরু পাড় শাড়ি এবং পায়ে নীল-সাদা হাওয়াই চপ্পল বললেই যাঁর কথা মনে পড়ে, তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বাংলার 'দিদি'। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে, তিনিও সামলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব। এদিক থেকে দেখতে গেলে বিজেপি নেত্রী প্রতিমা ভৌমিকের সঙ্গে তাঁর বাহ্যিক মিল একাধিক বিষয়ে। তবে কি, কোনও বিশেষ কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে অনুসরণ করেন ,প্রতিমা?
হাওয়াই চটি নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করতেই উত্তর আসে, "না না, একেবারেই না। আমার কাছে হাওয়াই চপ্পল কোনও পাবলিসিটি স্টান্ট নয়। আমি যখন ক্লাস নাইনে উঠি, তখন প্রথম আমায় চপ্পল কিনে দেওয়া হয়। চপ্পল পরে খুবই আরাম, আর এটা টেকসই এবং সস্তা। আমরা তো চাষির বাড়ির মেয়ে। তিন ভাইবোনের মধ্যে আমিই ছিলাম বড়। আমাদের কাছে টাকা থকত না। তবে খাওয়া দাওয়ায় অসুবিধা হয়নি কখনও।"
এরপরেই তিনি জানান, আসলে চপ্পল তাঁকে মাটির কাছাকাছি রাখে। নিজের শিকড়কে মনে করিয়ে দেয়। আর শাড়ি? শাড়ি এতটা সাদামাটা কেন? উত্তর আসে, "হ্যাঁ, অসমের বিজেপি সাংসদ কুইন ওঝা আমার মায়ের মতো। তিনি আমায় মাঝেমাঝেই দামী শাড়ি উপহার দেন। কিন্তু আমি সাধারণ সুতির শাড়ি পরতেই পছন্দ করি। এটাই আমি। "
আরও পড়ুন: রফায় রাজি! তবে মানতে হবে দাবি, বিজেপি-কে কী শর্ত দিলেন তিপ্রামোথার মাণিক্য?
১৯৭৭ সাল থেকে যে ধনপুর কখনও বামেদের হাতছাড়া হয়নি, যে কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, বামেদের সেই লাল দুর্গই এবার ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরের প্রতিমা। সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেছেন তিনি।
একে মহিলা রাজনীতিক। তার উপর জাতিতে 'নাথ'। জনজাতির প্রতিনিধি হয়েও ঝরঝরে বাংলা বলেন। রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতাও। সাদামাটা চেহারার এই প্রতিমা অনায়াসেই হয়ে উঠতে পারেন বিজেপির বাঙালি মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর মুখ।
গত বৃহস্পতিবারই বেরিয়েছে নির্বাচনের ফলাফল। ৬০ আসনের ত্রিপুরা বিধানসভায় ৩৩টি আসনে জয়ী হয়েছে মোদি-শাহের পদ্মশিবির। আগামী ৮ মার্চই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর শপথ। কিন্তু কে হচ্ছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী? মুখে কুলুপ এঁটেছেন মানিক-প্রতিমা দুই শিবিরের নেতারাই। তাঁদের এককথা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই শিরোধার্য।